ksrm-ads

২৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

অনিরাপদ হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষা

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

মেয়েদের শিক্ষার জায়গাটুকুও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। নরপিশাচ শিক্ষকদের ব্ল্যাকমেইলের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ‚শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’ বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের ক্ষেত্রে। শিক্ষার এ মেরুদন্ডটিও ভেঙ্গে দিচ্ছে নরপিশাচ শিক্ষক নামের নরপশুগুলোর কারণে। ফলে শিক্ষার প্রতি অনীহা জন্মাচ্ছে ছাত্রীদের অভিভাবকদের। মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় আছে বাবা-মায়েরা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয়। এভাবে নারী শিক্ষার্থীদের পাহারা দিয়ে কতক্ষণ শিক্ষার আলো দেয়া যাবে। এমন প্রশ্ন এখন সকল অভিভাবকদের। শিক্ষার জায়গাটুকুও যদি নিরাপদ না হয় তাহলে মেয়েদের শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। পিছিয়ে পড়বে মেয়েরা। এভাবে সমাজ ব্যবস্থা ক্রমাগত কুলষিত হতে থাকবে।

গত শুক্রবার রাতে বান্দরবানের রুমা নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমর কান্তি দত্ত এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালে ফেল করা এসএসসি শিক্ষার্থী এই শিক্ষকের বাড়ীতে গিয়ে পড়ালেখা করতো। সুযোগ বুঝে লম্পট শিক্ষক মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ও ভিডিও ধারণ করে। এ ভিডিওটি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আবারও অশ্লীল বাক্যব্যয় ও ধর্ষণের কুপ্রস্তাব দেয়। এমনকি মেয়েটির মোবাইলে আগের ভিডিওটি পাঠিয়ে দেয়।  মেয়েটি বিষয়টি সে তার বড় বোনকে জানায়। এ ঘটনায় রুমা থানায় শিক্ষার্থীর বড় বোন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ও পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করে। পুলিশ শিক্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। শনিবার বান্দরবান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লম্পট শিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ শিক্ষকের বাড়ী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। ।  

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল র‌্যাব সেভেনের এক অভিযানে উঠে এসেছে,  চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন কুয়াইশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোবাইলে ছাত্রীর অশ্লীল ছবিসহ এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে। শিক্ষক লেবাসধারী এ নরপিশাচের মোবাইলে ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে ইমু ও হোয়াটস এ্যাপ এ ভিডিও ধারণ করা অশ্লীল ফুটেজও জব্দ করেছে র‌্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিম।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সনে চট্টগ্রামের নিউরন ইংলিশ স্কুলের শিক্ষক আয়াতুল ইসলাম (৩৫) এর বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি থানাধীন মুসলিম ব্লক এলাকার  ফয়জুল হকের ছেলে এই নরপিশাচ শিক্ষক। মাত্র ১২ বছর বয়সী ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাথরুমের কিছু অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে আয়াতুল। পরে সে এই ভিডিও গোপনে  মেয়েটিকে দেখায়। এমনকি তাকে শ্লীলতাহানীর কু-প্রস্তাব দেয় শিক্ষকরুপী নরপিশাচ আয়াতুল। প্রস্তাবে রাজি না হলে  ভিডিওটি তার বন্ধু বান্ধবীর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে এমন হুমকীও দিতে পিছুটান ছিল না আয়াতুলের। এমনকি ইন্টারনেটে এসব ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি  দেয়। নিরুপায় হয়ে আত্মসম্মান রক্ষার্থে পরে রাজি হয় মেয়েটি। এই সুযোগকে পুঁজি করে প্রায় তিন বছর যাবত মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে চালানো হয় যৌন নিপীড়ন। শেষতক আয়াতুল মেয়েটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, একপর্যায়ে মেয়েটিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইমু, ম্যাসেঞ্জার এবং হোয়াটস আ্যাপে অশ্লীল ছবি আয়াতুলের নিকট পাঠাতে বাধ্য করে। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর চলে এমনভাবে শিক্ষকের ব্ল্যাকমেইল।  নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশু মেয়েটি একপর্যায়ে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি র‌্যাব-৭ দফতরে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় যৌন নীপিড়নকারী শিক্ষক আয়াতুল ইসলামকে গত ১৫ এপ্রিল গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদে সত্য ঘটনা স্বীকার করে আয়াতুল। সে নাবালিকা শিশুটিকে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন করার কথা অকপটে স্বীকার করে।

অভিযান টিম যৌন নিপীড়নকারী এই শিক্ষকের মোবাইল ফোন থেকে মেয়েটির শতাধিক অশ্লীল ছবি উদ্ধার করেছে। তাছাড়া আসামির ফেইসবুকে ও ম্যাসেঞ্জারে শিশু ছাত্রীটিকে বাধ্য করে তোলা কুরুচিপূর্ণ অনেক অশ্লীল ছবি পাওয়া গেছে। ফলে এই নরপিশাচ শিক্ষকের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত যৌন নিপিড়নকারী এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করে শিক্ষককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন