আলমগীর মানিক, রাঙামাটি »
রাঙামাটির রাজস্থলীতে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের ২৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিনের খোঁজ মেলেনি। এদিকে, নিখোঁজ সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে রাজস্থলী থানায় চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন সালাউদ্দিনের আম্মা। এই মামলায় সম্ভাব্য সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করেছে রাজস্থলী থানা পুলিশ।
আটকরা হলো— মো. রুবেল (৩৩), উখ্যাইনু মারমা (৩৫), মোক্তার হোসেন (২৬) ও মো. পারভেজ (৩৮)। আটকদের বিরুদ্ধে নিখোঁজ সালাউদ্দিনকে খুন করার উদ্দেশে অবৈধভাবে অপহরণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন।
শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতারদের রাঙামাটির আদালতে সোপর্দ করলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর বিচারক ফাতেমা বেগম মুক্তা’র আদালত আসামিদের সি-ডব্লিউ মূলে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর রাজস্থলী উপজেলার আমতলি পাড়া এলাকায় কাজে সন্ধানে গেলে রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিনকে জেএসএস এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পরের দিন সালাউদ্দিনের ভাই রাজস্থলী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল। অপহরণের দীর্ঘ ২৬ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সালাউদ্দিনের খোঁজ মেলেনি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সালাউদ্দিনের বৃদ্ধ মা ছায়েরা বেগম বাদী হয়ে রাজস্থলী থানায় মামলা দায়ের করলে অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপরোক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে রাজস্থলী থানা পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার রুবেল ও পারভেজ দু’জনই ভাই এবং তারা স্থানীয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সাথে সখ্যতা রেখে তাদের হয়ে চাঁদা আদায়ের কাজ করে। অপরজন মামলার তিন নম্বর আসামি মোক্তার নিখোঁজ সালাউদ্দিনের ব্যবসায়িক পার্টনার বলে জানা গেছে।
এদিকে, আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা সালাউদ্দিন নিখোঁজের ২৬দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তার সংগঠন রাজস্থলী ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে নূন্যতম একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করা হয়নি।
এরআগে বাঙ্গালহালিয়ায় সালাউদ্দিনের পরিবারের সাথে দেখা করতে সরেজমিনে গেলে সেখানকার ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলার একজন ছাত্রনেতা নিখোঁজ হওয়ার পরে তার সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রেরণ না করায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত বাঙালি নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতেও দেখা গেছে। সালাউদ্দিন বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে উপজেলার নেতারা তার জন্য কোনো প্রকার প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করেনি এবং সংবাদ মাধ্যমেও কোনো বিবৃতি দেয়নি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এতে কোনো সন্দেহ নাই বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নেতৃবৃন্দ।