দেড়লাখ টাকা মুক্তিপণে অপহরণের ২৭ ঘন্টা পর মুক্তি পেলেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়ের অপহৃত টমটম চালক তারেকুর রহমান (২৫)।
বুধবার (২২ নভেম্বর) ভোররাত তিনটার দিকে রামুর জোয়ারিয়ানালা-রশিনগরের পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় তাকে ছেড়ে দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এমনটি নিশ্চিত করেছেন তারেকের মামা ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা নিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই অপহরণকারীদের কথা মত কাউকে না জানিয়ে দেড় লাখ টাকা তাদের হাতে হাতে বুঝিয়ে দিয়ে পাহাড়ের কিনারা থেকে তারেককে ছাড়িয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুন: নিলামে উঠছে মেসির জার্সি
গত সোমবার (২১ নভেম্বর) রাত এগারোটার দিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কের পানেরছড়া ঢালায় ঈদগড়ে তারেকুর রহমান (২৫) ও শহীদুল ইসলাম (২৬) অপহরণের শিকার হয়।
তারেক ঈদগড়ের ১নম্বর ওয়ার্ডের ধুমছকাটার মো.ওসমানের ছেলে ও স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলমের ভাগিনা। শহীদুল ইসলাম একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ছগিরাকাটা এলাকার দানু মিয়ার ছেলে এবং পেশায় বীমাকর্মী।
ইউপি সদস্য খোরশেদ জানান, সোমবার রাতে টমটম নিয়ে ঈদগাঁও বাজার থেকে ঈদগড় যাচ্ছিলেন টমটম চালক তারেক, শহিদুল ইসলাম, জাহেদ ও আব্দুল খালেক। পথিমধ্যে পানেরছড়া ঢালায় অপহরণকারীদের কবলে পড়ে তারা। অপহরণকারীরা সবজি বিক্রেতা আব্দুল খালেক ও জাহেদকে ছেড়ে দিলেও তারেক ও শহিদুলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে ভোরে পাহাড়ের এক আস্তানা থেকে অন্য আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার সময় অপহরণকারীদের কবল থেকে পালিয়ে আসে শহিদুল। কিন্তু তার মোবাইলটি অপহরণকারিদের কাছে থেকে যায়। সেই মোবাইল দিয়ে তারেকের মা হোসনে আরার কাছে ফোন করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
পরিবার সূত্র জানায়, আগামী শুক্রবার তারেকের বিয়ে। বিয়ের দাওয়াতপত্র অর্ডার করতে বন্ধু শহিদুলকে নিয়ে ঈদগাঁও বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে ধুমছকাটা এলাকার আরো দুই যাত্রী উঠেছিল তারেকেরে টমটমে। অপহরণের পর দুর্বৃত্তরা তারেক ও শহীদুলকে বেধড়ক মারধর করে। আটজন অপহরণকারি দলে ৫ জন ২৫-৩০ বছর বয়সী তরুণ এবং বাকিরা ৪০-৪৫ বছর বয়সী। তাদের হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো ছুরি এবং দা ছিল।
অপহরণকারীরা মুক্তিপণের বিষয়ে প্রশাসন বা ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা নিলে তারেককে হত্যা করে লাশ পাহাড়েই রেখে দিবে বলে হুমকিও দেয়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার হলেও প্রাণ রক্ষায় ধার-দেনা করে দেড় লাখ টাকা যোগাড় করে অপহরণকারিদের কথা মতো একজনকে টাকাসহ রামুর জোয়ারিয়ানালা-রশিনগরের পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় নিয়ে টাকা বুঝে পাবার পর তারেককে ছেড়ে দেয়। এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসন কিংবা গণমাধ্যমে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। বাড়াবাড়ি করলে এরপরের বার সোজা হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়ায় তারেক ও তার পরিবার কোন কথায় বলছেন না।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান অপহৃত তারেক ফিরে এসেছে শুনেছেন দাবি করে বলেন, অপহরণের খবর পাওয়ার পর থেকে নানা সময়ে আশপাশ এলাকা ও পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। হয়ত অব্যাহত অভিযান দেখেই অপহরণকারিরা তাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারেকের পরিবার লিখিত কিছুই জানায়নি। এরপরও পাহাড় কেন্দ্রীক দুর্বৃত্তদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।