ksrm-ads

১৯ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

অবশেষে ‘অঘোষিত’ বন্ধ কক্সবাজারের পর্যটন

সায়ীদ আলমগীর  »

নতুন করে কক্সবাজার জেলায় গত মার্চ মাসে ৫১৯ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। ৩১ মার্চ একদিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ জন। এদের মাঝে ৪১ জন কক্সবাজারের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা আক্রান্ত হয়েছে একজন। বাকি একজন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার। ফলে, ধীরে ধীরে সংকোচিত করে ফেলা হচ্ছে পর্যটন স্পটে বেড়ানো। ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেন্টমার্টিনে পর্যটনবাহি জাহাজগুলো। গুটিয়ে ফেলা হয়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতে পর্যটকদের বসার জন্য সাজানো কিটকট চেয়ার। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার শহরে গণজমায়েত রদ, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রিবহন রোধসহ সৈকত ও হোটেল-মোটেল জোন এবং পর্যটনস্পট গুলোতে কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটগণ। মাঠে নেমেছে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশও। এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ আহসান।

এদিকে, গত মাসের মাঝামাঝি হতে দেশের ৩১ জেলায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় এ ৩১ জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মাঝে অন্যতম পর্যটননগরী কক্সবাজার। এছাড়া বাকি জেলা গুলো হলো, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজবাড়ী, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, নড়াইল, নীলফামারী, গাজীপুর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর, নওগাঁ, রংপুর, কিশোরগঞ্জ, নাটোর ও টাঙ্গাইল ।

এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সূত্র জানায়, এসব জেলার প্রতিটিতে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আবার কোনো কোনো জেলায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শনাক্তের হার উঠেছে। আবার কয়েকটি জেলায় ২০ শতাংশের ওপরে শনাক্তের হার। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে থাকা জেলাগুলোকে উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত এক মাসে সারাদেশের মত কক্সবাজারেও করোনা আক্তান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েছে। এটা ক্রম উর্ধমুখী। পরিসংখ্যান মতে গত ১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৭৭ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছেন (গড়ে ৪২২জন)। এর মাঝে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৫১৯ জনের। কক্সবাজারে করোনা পরিস্থিতি কঠিনের দিকে যাচ্ছে। এ মূহুর্তে সকলের সচেতন হওয়া খুবই জরুরী।

সিভিল সার্জন আরো জানান, গেল ২০২০ সালের পহেলা এপ্রিল হতে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের তিন ল্যাবে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার-বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের এক লাখ ২১ হাজার ৪৫ জনের পরিক্ষা করা হয়। এতে পজেটিভ হয়েছেন ৭ হাজার ৯৪২ জন। কক্সবাজার জেলায় পরীক্ষার আওতায় আসা ৬৯ হাজার ৯০৯ জনে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ১৫৮ জন। এ হিসেবে কক্সবাজারে আক্রান্তের হার প্রায় ৯শতাংশ। বান্দরবান জেলা ৫ হাজার ৪৭০ জনে পজেটিভ হয়েছেন ৮৮৬ জন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১১ হাজার ৩৩৯ জনে পজেটিভ হয়েছেন ৪২৭ জন। রোহিঙ্গাদের ৩৪ হাজার ৩২৭ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছেন। তাদের মাঝে পজেটিভ এসেছে ৪৭১ জন। করোনার শুরু হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মারা গেছেন ৮৩ জন। এর মাঝে রোহিঙ্গা রয়েছেন ১০ জন।

করোনার ঠিকাদান বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, কক্সবাজারে করোনার টিকা এসেছে ৮৭ হাজার ২২৮টি, প্রয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার জনকে। ৯ কেন্দ্রে ২৬টি বুথে এ টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সৈকতে গোসলকালীন ভেসে যাওয়া বিপদাপন্ন পর্যটক সেবায় থাকা সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, শুক্র-শনিবার ছুটির দিন ছাড়াও প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও স্থানীয় ভ্রমণপিপাসু কক্সবাজার সৈকতে আসেন। করোনা কালে সতর্কতার জন্য মাস্ক পরার কথা থাকলেও হাতেগোণা কয়েকজন ছাড়া সিংহভাগই মাস্কহীন বালিয়াডিতে নামে। পর্যটন স্পট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বালাই না থাকায় কক্সবাজারে ফের করোনার প্রাদূর্ভাব বেড়েছে। বুধবার সন্ধ্যা হতে সৈকতে পর্যটকদের জন্য বসানো কিটকট চেয়ার গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিনের মতো বৃহস্পতিবারও সকাল হতে করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পড়া ও নিরাপদ দূরত্ব পালন এবং সৈকত ও অন্যপর্যটন স্পটে জনসমাগম সীমিত করণে প্রতিটি পয়েন্টেই জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া সুলতানা, সৈয়দ মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি মাইকে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। মাস্ক সরবরাহ করে সচেতনতার পাশাপাশি জরিমানাও করছেন তারা।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক, ট্রপিক্যাল মেডিসিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও করোনা প্রতিরোধ সেলের চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসহ ৩৫ লাখ মানুষের বাস। গত বছর মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত টানা তিন মাস করোনা দেশে তান্ডব চালিয়েছে। এবারও একই সময়ে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। সরকারি নির্দেশনা না মানলে চরম বিপর্যয় ঘটতে পারে।

করোনা রোগীকে স্বেচ্ছায় সেবাদেয়া বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন,পুরো মার্চ মাসেই করোনা রোগীর আধিক্য বেড়েছে। কোন লক্ষণ ছাড়াও অনেকে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। তারাও পরে করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। এটি উদ্বেগজনক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সচেতনতার বিষয়ে উদাসীনতার কারণে কক্সবাজারে করোনার প্রাদূর্ভাব বাড়ছে। যানবাহন চালক, যাত্রি ও পথচারীদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত এবং জনসমাগম সীমিত করতে জেলা প্রশাসনের মতো পুলিশও মাঠে কাজ করছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আপাতত সরকারের জারি করা ১৮ নির্দেশনা মত সৈকতে পর্যটক সমাগম সীমিত করার জন্য কাজ চলছে। আগের মত সৈকতে জনসমাগম হতে দেয়া হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে প্রতিদিন। করোনার প্রাদূর্ভাব তীব্রতর হতে থাকলে অন্য জেলার মতো পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের পরিধি ব্যাপক হওয়ায় অনেক স্টেকহোল্ডার এখানে সম্পৃক্ত। তাই সকল পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন