বাংলাধারা প্রতিবেদক »
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২০১৮ সালের সংশোধিত বিধিমালা (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী বুধবার তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এখন বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হবেন তিনি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, সাসপেন্ড থাকাকালীন মোয়াজ্জেম হোসেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন। ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, নুসরাতের ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও দুই এসআইর বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সোনাগাজীর ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠন করেছিল, সেই প্রতিবেদনে এসপি, ওসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। ওসিকে সাসপেন্ড করার মধ্য দিয়ে তাদের একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হলো। এর আগে ঘটনার পর ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই এসপি, এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালান। তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ‘আত্মহত্যা’র নাটক সাজাতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ওসি শুরুতেই জানিয়েছিলেন, নুসরাতের ঘটনা আত্মহত্যা হতে পারে। এসপিও শুরু থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হন।
এ ঘটনার তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সুফিয়াসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যে কোনো মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির অতীত কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে হবে। মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া কাউকে এসব পদে না বসানোর সুপারিশ করা হয়।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, নুসরাতের ঘটনায় ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি পি কে এনামুল কবিরের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
নুসরাত রাফির পরিবার ও এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, ওসির মদদে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এলাকায় দাপট নিয়ে চলতেন। একাধিকবার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। সাহস ও প্রতিবাদ নিয়ে রাফি রুখে দাঁড়ানোয় বেরিয়ে এসেছে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা ঘিরে নানা অপকর্মের কাহিনী।
একাধিক সূত্র জানায়, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে শ্নীলতহানি করেছে- এটা জানার পরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ওসি মোয়াজ্জেম। ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেন নুসরাত।
সোনাগাজী থানায় যাওয়ার পর নিয়ম ভেঙে তার বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন। দু’হাতে মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এ সময় ওসি বলতে থাকেন- ‘মুখ থেকে হাত সরাও। কান্না থামাও। এমন কিছু হয়নি যে, এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’ নুসরাতের সঙ্গে ওসির আচরণ ছিল আপত্তিকর।
নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশিট দাখিল করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরই মধ্যে নুসরাত হত্যায় ১৬ জনের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর