বাংলাধারা ডেস্ক »
কেবল আইএমএফ-ই নয় বিশ্বব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছেও ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলমান ডলার সংকট কাটাতে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সাপোর্ট) চেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
গত রোববার (২৪ জুলাই) আইএমএফ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভার কাছে লেখা প্রস্তাবটি সংস্থাটির রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের মাধ্যমে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছে। দেশে আইএমএফ এর সাম্প্রতিক সফরের পরই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়।
অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে আইএমএফ-কে প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরুর অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ যাতে আগামী তিন বছরের জন্য অর্থপ্রদানের ভারসাম্য রক্ষা এবং বাজেটের প্রয়োজনে এই ঋণ ব্যবহার করতে পারে- সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এখন আইএমএফ সদরদপ্তর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য একটি টিম গঠন করা হবে। তাদের সঙ্গে শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা শেষে এই ঋণ পাওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ৬ মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে বাংলাদেশে। এতে করে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। এদিকে ক্রমবর্ধমান ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে। অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ রেশনিং এর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য হয়েছে সরকার।
এসব প্রেক্ষাপটেই আইএমএফ থেকে আগামী তিন বছর মেয়াদে এই ঋণ নেবে সরকার।
কেবল আইএমএফ-ই নয় বিশ্বব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছেও ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও, চীনের নেতৃত্বাধীন দ্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পেতে আলোচনা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে ৯৯ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে খুব শিগগিরই চুক্তি সই হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে যতো বেশি সম্ভব বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছর ১.৮৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
‘আইএমএফ এর কাছ থেকে বড় অংকের বাজেট সাপোর্ট নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয় এক বছর আগে। এতদিন ধরে সংস্থাটির সঙ্গে ইনফরমাল আলোচনা করে ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে’, জানান সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে নাগাদ শুরু হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়ে সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের জন্য একটি টিম গঠন করবে। তাদের সঙ্গে ঋণের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে নেগোসিয়েশন হবে।’
‘আলোচনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। আইএমএফ যতো দ্রুত টিম গঠন করবে, ততো দ্রুত আলোচনা শুরু হবে’, যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বজুড়ে কোভিড সংক্রমণের শুরুতেই বাংলাদেশ বাজেট সাপোর্ট পেতে তৎপর হয়ে উঠে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৭.৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়া যায়, যার মধ্যে গত জুন পর্যন্ত ৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছাড় হয়েছে। এই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে বলে জানান তারা। বাকিটা চলতি অর্থবছর ছাড় হবে।
কোভিডকালীন সময়ে এই বাজেট সাপোর্ট নেওয়া না হলে এখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০-৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতো, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে আরও ঝুঁকিতে ফেলতো।
অর্থনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে আইএমএফ থেকে সমর্থন চাওয়া দেশের তালিকায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাথে এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশও। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট দ্রুতগতির মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো। সূত্র : টিবিএস