ksrm-ads

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

আট মাস ধরে ‘রহস্যজনক নিখোঁজ’ প্রবাসী হাবিব

সায়ীদ আলমগীর  »

২০২০ সালের ২১ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে দেশে ছুটি কাটাতে আসেন কক্সবাজার পৌর শহরের বদর মোকাম এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী হাবিব উল্লাহ (২৮)। দেশে আসার ১০ দিনের মাথায় পহেলা (১) নভেম্বর চট্টগ্রামে যাবার পথে নিখোঁজ হন প্রবাসী এ ব্যবসায়ী।

তার বাবা আবদুল হাকিম কলাতলী পর্যটন জোনের তারকা হোটেল ‘সী ভিউ’র মালিক। হাবিব নিজেও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। চীন ও সৌদিতে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে।

নিখোঁজের পর তাকে উদ্ধারে সহযোগীতা পাওয়ার কথা বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, র‍্যাব ও শৃংখলা বাহিনীর নানা বিভাগ এবং প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে হাবিবের বাবার কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিখোঁজ ভিকটিমের বোন জামাই আহমেদ ছফা। তিনি (ছফা) কক্সবাজার পৌর শহরের আলীর জাঁহালের শামশুল হুদার ছেলে। নিখোঁজের বিষয়ে গত আট মাসে প্রশাসনকে আট ধরণে তথ্য দেয়ায় হাবিবের নিখোঁজের পেছনে তার (ছফার) হাত রয়েছে বলে মনে করছেন স্বজন ও শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।

হাবিবের পরিবারের ভাষ্যমতে, ১ নভেম্বর চট্টগ্রামে নাসরিন আক্তার নামে এক মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতে বের হন হাবিব। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘ আট মাসও আর হাবিবের সন্ধান মিলেনি।

এ দীর্ঘ আট মাস ধরে হাবিবের খোঁজ না পেয়ে দিশহারা তার পরিবার। তবে রহস্যজনক কারনে হাবিবের নিখোঁজের বিষয়ে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে সঠিক তথ্য না দেয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলেছে পরিবারটি। ফলে, হাবিবের নিখোঁজের বিষয়ে জানে না জেলার আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

অথচ হাবিবকে উদ্ধারের নামে তার পরিবারের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‍্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে এরমধ্যে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিখোঁজের বোন জামাই আহামেদ ছফা নামের এক ব্যক্তি। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানে না সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার সদর থানায় ওসি তদন্ত বিপুল চদ্র দে বলেন, আট মাস আগে থানায় একটি নিখোঁজ ডাইরি করা হয় (জিডি নং-১০২; তাং-২-১১-২০২০ইং)। কিন্তুু এরপর হাবিবের পরিবারের কেউ এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করেনি। অথচ থানার সামনে কয়েক কদম পর হাবিবদের বাড়ি।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম যান হাবিব উল্লাহ। ওইদিন রাত ১০টার পর তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর নানা জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেই থেকে আজ-অব্দি হাবিবের সন্ধান না মিললেও থানায় কিংবা প্রশাসনের কাছে যায়নি নিখোঁজের পরিবার।

এ বিষয়ে জানেত চাইলে হাবিবের বাবা আবদুল হাকিম বলেন, জিডির কপিটিসহ মেয়ে জামাই ছফাকে নিয়ে র‍্যাব-১৫ কার্যালয়ে যায়। সেখানে যা বলার তা মেয়ে জামাই ছফা-ই বলেছে। ফেরার পথে ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে কোন মামলা করা ও গণমাধ্যমকে তথ্য দেয়া থেকে দূরে থাকতে র‍্যাবের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়। এরপর ছেলেকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে চুক্তিভিত্তিক র‍্যাবের কর্মকর্তাদের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তবে, তিনি এও স্বীকার করেছেন র‍্যাবকে সরাসরি নয়, তার মেয়ের জামাই আহমেদ ছফা-ই র‍্যাবের জন্য টাকা নিয়ে গেছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের কিছু স্বজনের দাবি, হাবিব নিখোঁজের পরদিন থেকে তার সন্ধানের বিষয়টি ‘রহস্যজনক’ ভাবে একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বোন জামাই আহামেদ ছফা। নিখোঁজ হাবিব যেন তার (ছফার) জন্য ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’। তাকে উদ্ধারের নামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সময় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা নিয়েছেন আহমেদ ছফা। তাদের ধারণা হাবিবের অবস্থান কিংবা নিখোঁজ পরবর্তী সকল তথ্য বোন জামাই আহমেদ ছফা অবগত।

এদিকে, বিয়ের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় স্বামীর এমন দুর্ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন স্ত্রী রিপা মনি। তিনি বলেন, স্বামীর নিখোঁজ হওয়াটা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আমার ধারণা নিকটাত্মীয়দের কেউ এ ঘটনার পেছনে ‘কলকাঠি’ নাড়ছেন। পুরো পরিবারকে বোকা বানাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। টাকাও নেয়া হয়েছে অনেক। কিন্তু স্বামীর দীর্ঘ আট মাস সন্ধান না পাওয়ার ঘটনায় আমার ভেতর কি পরিস্থিতি হচ্ছে তা কাউকে বুঝাতে পারছি না।

জানতে চাইলে আহামেদ ছফা বলেন, হাবিবের বিষয়ে র‍্যাব, পুলিশ এমন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশের অনেক বড় বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাথাব্যথা করছেন। এরপরেও তাকে কিছুতেই উদ্ধার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, যে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল তার পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে কিছু করা যাচ্ছে না।

হাবিব নিখোঁজ নিয়ে গণমাধ্যম এড়িয়ে চলার বিষয়ে আহামেদ ছফা বলেন, বিষয়টি প্রচার করে কি লাভ? প্রশাসন তো সবই জানে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেখানেও ৪ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এসময় শৃংখলা বাহিনীর নামে টাকা লেনদেনের বিষয়টি এড়িয়ে যান আহামেদ ছফা।

এদিকে হাবিবের নিখোঁজের বিষয়ে প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহ করছে দেখে গত রবিবার (২৭ জুন) তড়িগড়ি করে কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে নিখোঁজের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। নিখোঁজের পরিবারের পক্ষ হয়ে আহমেদ ছফার ভাই জেলা জাতীয় পার্টির নেতা রুহুল আমিন সিকদার বিজ্ঞাপন আকারে ছাপানো সংবাদটি ঢাকার পত্রিকায় প্রচারের অনুরোধ জানান। এসময় নিখোঁজ নিয়ে ছফার রহস্যময় আচরণ এবং প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নানা জায়গায় দেয়ার নামে টাকা হাতানোর বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয় প্রচার করা যাবে না। আপনার সাথে (প্রতিবেদকের) মুখোমুখি দেখা করে সব বলবো।

জানতে চাইলে র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তির বাবা আহমেদ ছাপাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার অফিসে আসেন ছফা নামে একজন। তিনি একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‍্যাবের নাম ভাঙিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়টি অবগত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ নিখোঁজ হলে মামলা বা গণমাধ্যম খবর প্রচার হলে আমাদের জন্য আরও সহায়ক। সুতারং এ বিষয়ে নিষেধ করার প্রশ্ন-ই আসে না। এখন যেহেতু এসব কথা সামনে এসেছে, বিষয়টি গভীরে খতিয়ে দেখবে র‍্যাব।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন