ksrm-ads

১৮ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

আড়ম্বর আয়োজন নেই, তবুও আশাবাদী ব্যবসায়ীরা

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কক্সবাজারেও পালন করা হবে দিবসটি। কিন্তু কোন আড়ম্বর আয়োজন নেই। শুক্রবার সকালে র‌্যালি, বিকেলে লাবণী পয়েন্টে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পালিত হবে বিশ্ব পর্যটন দিবস।

অতীতের মতো জমকালো কোন আয়োজন না থাকলেও দিবসটি ঘিরে কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন লাখো দর্শণার্থী, এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বলছে, কক্সবাজারে ঘুরে বেড়ানোর প্রধান স্পট সমুদ্র সৈকত তীর। দেখার জন্য রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ মন্দির ও প্যাগোডা, ধাতু ও ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধ মূর্তি, ছোট-বড় ১৩টি বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে লাল সিং ও পাশে সাদা সিং নামের বৌদ্ধ বিহার, বৈচিত্রময় জীবনধারা, ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, হিমছড়ি ঝর্ণা। রয়েছে দেশের একমাত্র ফিস একুরিয়াম।

তবে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন স্পট হলেও এসব সুরক্ষায় কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়না। সরকার বিভিন্ন সময় নানামুখী পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত তা কিছুই হয়নি। উল্টো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, লাবনী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বালুকাবেলা দখল হয়েছে অসাধুচক্রের হাতে। আর বালিয়াড়ি দখল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাইসেন্সও দেয়া হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময় পর্যটকরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আবার অনেক সময় ছিনতাইকারী ও টমটম চালকদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন অনেক পর্যটক। রয়েছে ভাতের হোটেল ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও।

সরজমিনে দেখা যায়, বর্ষার পানির তিব্র স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমি। তীরে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সে ঝুঁপড়ি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে বেশ কয়েকটি চক্র। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। নির্মল হাওয়া থেকে কিটকট চেয়ার বা শুকনো বালিতে বসার কোন জোঁ নেই। বীচ বাইক, ঘোড়ার অবাধ বিচরণ, ভ্রাম্যমান হকারদের ডাকাডাকিতে চরম বিড়ম্বনায় থাকে দর্শণার্থীরা। জোয়ারের আঘাতে সৈকত পারের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে বিপুল ঝাউগাছ। দরিয়ানগর, হিমছড়িতে কিছুটা সংস্কার হলেও অন্য কোথাও কোন সংস্কার হয়নি। নেই কোন সুরক্ষা ব্যবস্থাও। ফলে পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারছে না কক্সবাজার।

পর্যটকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক আসলেও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার কোন আয়োজন নেই সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন স্পটগুলো আগের চেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে।

তাদের মতে, দীর্ঘতম সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এ শিল্পকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা বলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। অযত্ন-অবহেলায় জৌলুস হারাতে বসেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তীর কক্সবাজার।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালীন সময় থেকে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। শুধু ছাত্র আন্দোলন থেকে চলতি সময় পর্যন্ত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ শিল্পে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অমানিশায় ঢেকে যাবে এ শিল্প।

সৈকতে পরিবার নিয়ে আসা শাহজাহান সম্রাট বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার এসেছিলাম। সে সময় সৈকতের যে পরিবেশ ছিল, এখন তা নেই। পুরো সৈকতের বেহাল অবস্থা। কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে বেলাভূমি বিভক্ত হয়ে গেছে।

আমীর মুহাম্মদ বলেন, বাড়ির সবাইকে হিমছড়ি গিয়েছিলাম বুধবার। টমটম চালকের টানা হেছড়া চরম অসহ্য। পর্যটন এলাকা মানে ‘গ্যানজাম’ দেখি আমরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, অবৈধ পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল নিধন, সরকারী খাসভূমি দখল, অপরিকল্পিত ইমারত তৈরীর ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ব্যবসার নামে যত্রতত্র নির্মাণ করা হচ্ছে ইট পাথরের স্থাপনা। সৈকতে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুঁপড়ি দোকান। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক মো. কলিম উল্লাহ বলেন, এখন পর্যটন শিল্পের অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা এবং মাদক। আর যেভাবে পাহাড় ও পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে ভবিষ্যতে মরুভূমি হবে কক্সবাজার। কোন পর্যটক মরুভূমি দেখতে কক্সবাজার আসবেন না। এসব অনিয়ম বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক ও ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মঈনুল হাসান পলাশ বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এরজন্য নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজারের দায়িত্বশীল ও হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে আবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। আর পর্যটন বোর্ড পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি ভাল কিছু হবে।

রেস্তোরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ডালিম বলেন, বিভিন্ন সময় দেশে নানা সমস্যার কারণে ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা গেছে। অনেকে তো রেস্তোরা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করেছিল। তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। আস্তে আস্তে বন্ধ থাকা রেস্তোরাও খুলছে। তবে আগের মতো সে অবস্থা নেই। তারপরও আমরা আশাবাদি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। মাঝে মাঝে পর্যটক হেনস্থার ঘটনায়ও এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলাফল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারি পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। এরপরও পর্যটনকে সাজাতে হোম ওয়ার্ক শুরু করেছি। পর্যটন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কউক, সড়ক ও জনপদ, কক্সবাজার পৌরসভা, পর্যটন কর্পোরেশনের শৈবাল-প্রবাল, বিমান বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে বৈঠক করে ছয়টি করণীয়ও নির্ধারণ করেছি। নাগরিকদের নিয়ে একটি সুপারভিশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক কথায় কক্সবাজারকে ঘিরে আমাদের সামগ্রীক প্লান রয়েছে। তবে সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন