চবি প্রতিনিধি »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিভিন্ন পর্ষদে ৪৩০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদের জনবল নিয়োগের অর্থ বরাদ্দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে বার বার আবেদন জানানো হলেও এ পর্যন্ত একজন কর্মচারী নিয়োগের জন্যও অর্থ বরাদ্দ পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে সংশ্লিষ্ট পর্ষদ সচল রাখতে দৈনিক ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে।
রবিবার (৫ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্যের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্ষদে ৪৩০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদের জনবল নিয়োগের অর্থ বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আবেদন জানানো হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউজিসি একটি ফরমেটে এসব অর্থ বরাদ্দে চাহিদা পুনরায় পাঠাতে বলে। কিন্তু এ পর্যন্ত একজন কর্মচারী নিয়োগের জন্যও অর্থ বরাদ্দ পায়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
তিনি বলেন, ইউজিসি অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় সৃষ্ট সংকট নিরসন এবং বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল ও রিসার্চ সেন্টারগুলোর কার্যক্রম সচল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য দৈনিক ভিত্তিতে কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি মেনেই কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে গত ১ মে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদকে প্রতিবেদকদের মনগড়া, অসম্পূর্ণ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছেন বলে উল্লেখ করে রেজিস্ট্রার বলেন, এ প্রতিবেদনের ফলে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে সংবাদটির ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কেএম নুর আহমদ বলেন, সংবাদটির প্রথম বাক্যেই প্রতিবেদকদ্বয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। সংবাদটির প্রথম বাক্যেই তারা উল্লেখ করেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদের শেষ দিকে এসে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) একের পর এক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’ এ বাক্যে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগকে মাস্টাররোল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন তারা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও মাস্টাররোল সম্পূর্ণ পৃথক দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট পাঁচ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এগুলো হল স্থায়ী, অস্থায়ী, অ্যাডহক, মাস্টাররোল ও দৈনিক মজুরীভিত্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে উপাচার্য এগুলোর যে কোনো একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিবেদকদ্বয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ দিতে ইউজিসি’র অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়টি উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে এড়িয়ে যান। প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংকট রয়েছে- এ বিষয়টিকেও প্রথম আলো এড়িয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সংকট সমাধানে নিয়মসিদ্ধ দৈনিক ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টিকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করেন।
সংবাদটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তা জানা নেই। কারণ উপাচার্য এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য হল, সিন্ডিকেট মনোনীত নিয়োগ বোর্ড যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নিয়োগ দিয়ে থাকে। উপ উপাচার্য সিন্ডিকেটের একজন সদস্য। অতএব এ নিয়োগের বিষয়ে তিনি অবগত নন, কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তাছাড়া আদৌ উপ-উপাচার্য এ ধরণের বক্তব্য প্রথম আলোকে দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্দিহান। প্রথম আলোর প্রতিবেদকদ্বয় তাদের প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগবিধির বিষয়ে কোনো ধারণা না নিয়েই সংবাদটি উপস্থাপন করেছেন। নিয়োগ হওয়া ব্যক্তিদের চাকরির যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পেরে কে কোন রাজনৈতিক দল করে, কে কার আত্মীয়, কার বিরুদ্ধে ক’টি মামলা এসব অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে ধরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও সংবাদটির ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও প্রথম আলো তা প্রকাশ না করে তাদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং প্রচলিত সাংবাদিকতার অনুসরণ করেনি বলেও জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বিপুল সংখ্যক লোক নিয়োগের দুই মাস পর আবারো কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিকতার নৈতিকতা পরিপন্থি মনে করছেন এবং প্রকাশিত বক্তব্য প্রতিবেদকদ্বয়ের নিজস্ব মতামত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, তারা তাদের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে কর্মচারী পদে যে পাইকারি নিয়োগ দিয়েছেন, তা বাতিল করা হোক।’ প্রথম আলো’র সম্পাদকীয় যিনি লিখেছেন তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই কর্মচারীগুলো নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভাগ, হল, ল্যাবরেটটি, ইনস্টিটিউটগুলোর চাহিদার প্রেক্ষিতে দেওয়া এসব কর্মচারীর চাকরি যদি বাতিল করা হয় তাহলে ওই হল, বিভাগ, ল্যাবরেটরি, ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মচারীর কাজগুলো কে করে দেবে সে বিষয়ে আমরা প্রথম আলোর কাছ থেকে পরামর্শ চাই।
মূলত ‘প্রথম আলো’ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এগিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছে না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি ইতিবাচক কর্মকান্ডকে বিতর্কিতভাবে তুলে ধরার অপপ্রয়াসে লিপ্ত এই ‘প্রথম আলো’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চার বছরের যে অভূতপূর্ব একাডেমিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন সাধন হয়েছে সেসব বিষয়কে খাটো করতে কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়ে প্রথম আলো পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচারে নেমেছে।
এসময় প্রথম আলোর সম্পাদককে চবি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে যাবতীয় সমস্যা সমাধান করার আহ্বানও জানান চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র ও হেলাল উদ্দীনসহ কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর