ksrm-ads

২০ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

ইনানী সৈকতে বালির বাঁধ, তলিয়ে যেতে পারে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

বিশ্বের দীর্ঘতম অখন্ড সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে বিশাল আকারের বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এ বাঁধের ফলে দ্বিখন্ডিত হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়ি। এতে রক্ষুসে আচরণ করে ক্রমে ভেঙে তীরের দিকে আসছে সমুদ্র। এ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তলিয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এমনটি মনে কছেন পরিবেশবিদরা।

এ নিয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘পক্ষকাল ধরে ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেলের পশ্চিম পাশে সৈকত থেকে বালি নিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করে একটি বাঁধ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইসিএ এলাকায় এমন কাণ্ড নজরে আসার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এ বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য মেলেনি। অথচ কক্সবাজারসহ দেশের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় কোন স্থাপনা বা বাঁধ নির্মাণ আইনত অবৈধ।’

‘ইসিএ এলাকা হওয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ঠ কোন প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ বন্ধে এগিয়ে আসেনি। তাই আমরা বাঁধ নির্মাণস্থলে গিয়ে মানববন্ধন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করা করেছি।’- বলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী।

এদিকে, বিষয়টি নজরে আসার পর মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলরুমে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, জেলা জাসদ সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন মাসু, নৌ-বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্যাপ্টেন শাহ আলমসহ বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নৌবাহিনীর প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন শাহ আলম বলেন, ‘২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া আয়োজনের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে প্রায় ৩৫টি দেশের নৌ-বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিবেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি উক্ত নৌ-মহড়া উদ্বোধন করে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করার কথা রয়েছে। মহড়ায় অংশ নেয়া জাহাজে যেতে ইনানী সৈকত এলাকায় নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী জেটি নির্মাণ অনুমোদন দিয়েছেন দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম হওয়ায় আশা করছি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর অনুমতি দিবেন। সেটি মাথায় রেখেই কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।’

বৈঠকে পরিবেশবাদী নেতৃবৃন্দের পক্ষে জেলা জাসদ সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি চট্টগ্রামের একটি কোম্পানি ২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ নামাবেন। এর পেছনে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে কর্মরত অনেকে রয়েছেন। নৌ-বাহিনীকে সামনে দিয়ে জেটিটি নির্মাণের পর সে কোম্পানি এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহারের ফন্দি আঁটছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা বিধিবদ্ধ কোন সংস্থা ইসিএ ঘোষিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এমন কাজ আইনের প্রতি অবমাননার সামিল। জিও ব্যাগের বালি ভরে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধের উভয় পাশে পুকুরের মতো বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সরকারের বিরোধী নয়, তবে আইন মেনে সৈকতের অখণ্ডতা রক্ষা করে জেটি নির্মাণ হউক সেটিই আমাদের দাবি।’

বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারি পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, ‘পরিবেশ আইনে ইসিএ এলাকায় অবকাঠামো ও বাঁধ নির্মাণে বাঁধা রয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইনানী সৈকতে বাঁধ নির্মাণে কাউকে অনুমোদন দেয়া হয়নি।’

কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রক্রিয়া বন্ধে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের সহযোগিতা চাইলে তিনি মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দুপুরের পর ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেল এলাকায় নির্মিতব্য বাধ পরিদর্শনে যান। এসময় নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে সাংসদ কমল বলেন, ‘যেহেতু কক্সবাজার একটি ইসিএ এলাকা সেহেতু সৈকতে বালির রাস্তা তৈরি হলে সমুদ্র রাক্ষুসে রূপ ধারণ করতে পারে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটিও। মেরিন ড্রাইভ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া সম্পন্ন করতে উখিয়া এবং রামুর সংযোগস্থল সোনারপাড়া রেজুখাল মোহনাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।’

‘ইতিপূর্বেও উক্ত মোহনায় বড় জাহাজ নোঙর করার সক্ষমতা প্রমাণ হয়েছে। এটি একটু ড্রেজিং করা হলে সেখানে একটি স্থায়ী নৌ-ঘাটি ও জেটি নির্মাণ করা গেলে তা ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো যাত্রী নিয়ে এখান থেকে চলাচল করতে পারবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্টদের সাথে আমি কথা বলবো।’

কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় আয়োজন আইনের ভেতর থেকেই করা বাঞ্ছনীয়। অনুমতিহীন যেকোন কাজই আইন পরিপন্থী। আবার আইনে বাঁধা থাকলে ইসিএ এলাকায় কোন অবকাঠামো করতে রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ চাইলেও অনুমতি দিতে পারে না। কিন্তু সরকারি প্রোগ্রাম থেমে রাখাও অসম্ভব। বিতর্ক এড়াতে বিকল্প পথ অবলম্বন করতে হবে।’

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন