ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

ইপিজেড মোড়ে সন্ধ্যা গড়াতেই ‘ভাড়া সন্ত্রাস’ চলে লোকাল বাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে বিভিন্ন নম্বর যুক্ত বাস। কোন রুটে কত নম্বর বাস যাবে তা বোঝাতে লাল রঙ দিয়ে বাসের সামনের গ্লাসের সামনে লিখাও থাকে নম্বর। যা লোকাল বাস হিসেবেই যাত্রীদের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এসব বাসকে দিয়ে থাকে নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের পারমিট।

কিন্তু এই রুট পারমিটের কথা সন্ধ্যার পর ভুলে যায় বাস চালক ও হেলপাররা। সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়েই তারা ঘুরিয়ে ফেলে বাস। এক রুটের বাস চলাচল করে অন্য রুটেও! শুধু তাই নয়, ওঠা-নামা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। যার ফলে দিনের পর দিন জিম্মি হয়েই গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের অভিযোগ—বাসে চলে ‘ভাড়া সন্ত্রাস’।

সরেজমিনে নগরীর ইপিজেড মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, লালদিঘীর পাড় থেকে ছেড়ে আসা ৬ নম্বর এবং কালুরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ১০ নম্বর রুটের গাড়ির শেষ গন্তব্য সী-বীচ পর্যন্ত হলেও বিকেলের পর থেকেই তারা যাত্রী টানেন ফ্রিপোর্ট পর্যন্ত। একই কাজ করে ভাটিয়ারী থেকে সী-বীচ রুটে চলাচল করা ১১ নম্বর বাসের চালক-হেলপাররাও। পোশাক কারখানার ছুটির সময় হওয়ায় এসময় বাস চালক ও হেলপাররা দ্বিগুণ ভাড়াসহ বেশি যাত্রী পাওয়ার লোভে ফ্রিপোর্ট এর টিসিবি ভবনের সামনে থেকেই ঘুরিয়ে ফেলছেন গাড়ি।

ফ্রিপোর্ট মোড়ে যাত্রী নামিয়ে টিসিবি ভবনের সামনে থেকে ঘুরিয়ে ফেলা হচ্ছে খালি বাস

এসময় ইপিজেডের গেট থেকে শুরু করে মূলসড়ক পর্যন্ত লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ২০-২৫টি ফাঁকা ৬, ১০ ও ১১ নম্বর নম্বর রুটের বাস। ইপিজেড মোড়ে ১০ নম্বর রুটের একটি বাসের হেলপারকে ওঠা-নামা ২০ টাকা হিসেবে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা যায়। অথচ, গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মেট্রো এলাকায় চলাচলকারী বাসগুলোর।

সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হলেও দ্বিগুণ ভাড়া কেন নিচ্ছেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে বাস চালক প্রতিবেদককে বলেন, ‘দিনে এমনিতে তো ১০ টাকাই নেই। এখন গার্মেন্টস ছুটি হইছে তাই ২০ টাকা নিচ্ছি। মাঝেমধ্যে ১৫ টাকাও নিই। সারাদিনে ইনকাম কম হয়। তাই এখানে বাস ঘুরিয়ে তা পুষিয়ে নিচ্ছি।’

দ্বিগুণ ভাড়ায় তোলা হচ্ছে যাত্রী

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মালিককেও তো জমার টাকা দিতে হবে ভাই। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে সারাদিনের ইনকাম দিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যায়। এর ওপর হেলপারের বেতনও আছে।’

এসময় ১১ নম্বর রুটের একটি বাসের হেলপার ওঠানামা ২০ টাকা করে যাত্রী তুলছিলেন নিউ মার্কেটের। অথচ এই বাসটি যাওয়ার কথা ছিল অলংকার হয়ে ভাটিয়ারী রুটে।

১১ নম্বর রুটের বাস নিউ মার্কেট কেন যাচ্ছে এবং বাড়তি ভাড়া কেন?—জানতে চাইলে বাসের হেলপার প্রতিবেদককে বলেন, ‘সিস্টেম আছে, আপনাকে কেন বলব? অফিস টাইমে ভাড়া ২০ টা ওঠা-নামা এটা সবাই জানে। আর এখন অলংকারের দিকে ভাড়া নাই, তাই মার্কেটের ভাড়া মারি। লিগ্যাল ভাড়া নিলে অফিস শেষে মানুষের আর বাসায় যাওয়া লাগবেনা। এমনেও বাস কম। আর মানুষ এখন ৩‌০ টাকা বললে তাও যাবে।’

এদিকে, ঠিক ওই সময়ে গাড়ির জন্য হাহাকার করতে দেখা যায় রাস্তার অপর পাশে থাকা যাত্রীদের। কারণ—কাটগড় ও সী-বীচ যাওয়ার জন্য পাওয়া যায় না বাস। ফলে প্রতিদিনই এই সময়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীদের।

বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক সাইদুর রহমান। তিনি যাবেন সী-বীচ এলাকায়। প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিক এই সময় আমার অফিস ছুটি হয়। প্রতিদিন বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সন্ধার পর ফ্রিপোর্টের পরে আর বাস যায় না। বেশি টাকার আশায় তারা বাস ঘুরিয়ে গার্মেন্টস এর ভাড়া মারে।’

কাটগড় এলাকা থেকে কম্পিউটার ক্লাস করতে আসা রিমন বলেন, ‘আগে টমটম চলতো। কিন্তু এখন তা বন্ধ। বাস তো পাওয়াই যায়না কাটগড়ের। প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকি এভাবে। মুনাফালোভী এসব চালক-হেলপারদের লাগাম টেনে ধরার মতো কেউ কি নেই?’—প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জানা যায়, বিকেলের পর অধিকাংশ লোকাল বাসগুলো পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে রিজার্ভ ভাড়ায় গন্তব্যে যায়। অতিরিক্ত লাভের আশায় তারা এ কাজ করলেও এসময় সাধারণ যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। সন্ধ্যার পর অফিসগামী মানুষদের বাসায় ফেরার তাড়া থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস না থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাসের আশায়।

তবে এ বিষয়ে চালক-হেলপারদের কাউন্সিলিং করা হবে বলে জানিয়েছেন মেট্রো পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা আমজাদ হোসেন হাজারী। তিনি বাংলাধারাকে বলেন, ‘এটি আমার পূর্বে জানা ছিল না। আজকেই প্রথম শুনলাম আপনার কাছ থেকে। এরকম তারা করতে পারবেনা। রুট পারমিট অনুযায়ী শুরু এবং শেষ দুই জায়গাতেই তাদের যেতে হবে। কেউ না গেলে সেটা তার অপরাধ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি আমার নলেজে এখন আছে। আমি অবশ্যই তাদের ডেকে কাউন্সিলিং করব এবং সেটা আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সাথে নিয়েই।’

এদিকে বাস চালকরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়ে বাস ঘুরিয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী টানছে বলে দাবি মেট্রো পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলালের।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে অনেকবার বলছি এ ধরণের কোন কাজ হলে আইনের আওতায় আনার জন্য। সন্ধ্যার পর গাড়িগুলো রিজার্ভ এ চলে যায় এবং ভাড়া বেশি নেয়—যে ব্যাপারে আমরাও অবগত আছি। কিন্তু প্রশাসন তো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

‘ট্রাফিক বিভাগের সাথে নিশ্চই মাসিক চুক্তি আছে, যে কারণে তারা ধরে না। আবার ধরলেও এক হাজার টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়। তাদেরকে আইনের আওতায় আনেনা। এজন্যই চালকরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে মূল বিষয়।’—যোগ করেন তিনি।

তবে ট্রাফিক বিভাগের ওপর পরিবহন মালিক নেতার তোলা এ অভিযোগের বিষয়ে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা। আপনি আপনার গাড়ি না চালিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়ে ফিরে আসলে সেখানে পুলিশ কি করবে? এটা অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা। এটা ঠিক না।’

তিনি বলেন, ‘এক জনের দোষ আরকজনের ওপর চাপানো ঠিক না। দ্বিগুণ ভাড়ার বিষয়টি মালিক সমিতি দেখবে। আমরা দেখব লাইসেন্স, রুট পারমিট অথবা ফিটনেস আছে কিনা।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিশকাতুল তামান্না বাংলাধারাকে বলেন, ‘দিনের বেলা হলে দেখব। কিন্তু রাতের বেলা মোবাইল কোর্ট করার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটা রিট আছে। এর জন্য রাতের বেলা আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। এরপরেও আমরা ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখব।’

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ