আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের নতুনব্রিজের দুপারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। রমজানের শুরু থেকেই একের পর এক ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে মইজ্জ্যারটেক আর নতুনব্রিজ এলাকায়। ছিনতাইয়ের কাজে এ চক্রগুলো আবার অবলম্বন করছে নতুন নতুন কৌশল।এতে করে আতঙ্কে রয়েছেন ঈদমুখী সাধারণ মানুষ।
প্রতি বছর ঈদ এলেই বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রিজের চৌরাস্তার মোড় আর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জ্যারটেক মোড় এলাকায় প্রতারক চক্র, অজ্ঞান ও মলম পার্টি, চোর, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এই প্রতারক চক্র বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলকারী মানুষজনকে টার্গেট করে ছোবল মেরে নগদ অর্থসহ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল সেট অথবা প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
চক্রটি দিনের বেলায় চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার টেনে নিয়ে গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে পাল্টে যায় তাদের ছিনতাইয়ের ধরণও। অনেক সময় সিএনজি ভাড়া করে নিরিবিলি সড়কে এনে ড্রাইভার ও সিএনজি চালককে ছিনতাই করেন। নতুবা ড্রাইভারের ঘাড়ে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যান। রয়েছে ডাব ও পান খাওয়ানোর মতো নানা গল্পও।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, পথচারী হওয়াতে অনেকেই মামলায় যেতে পারেন না। আবার অনেকেই মামলা করেন। তবে ঈদকে ঘিরে যেন ছিনতাইকারীরা কোন সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য নতুনব্রিজ ও মইজ্জ্যারটেকে সারারাত পুলিশের টহল জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে নজরে পড়ার মতো পোশাকধারী ডিবি পুলিশের উপস্থিতিও দাবি করেন অনেক যাত্রী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের চিহ্নিত অপরাধীদের সঙ্গে পাশের উপজেলাগুলো থেকে আসা চোর, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। উল্লেখিত দুই স্পটে একাধিক ছিনতাই ও চোরচক্র চুরি ও ছিনতাই করার জন্য মাসিক-দৈনিক মজুরিতেও কিশোর-যুবকদের ভাড়া করছেন বলেও বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যাচ্ছে।
গত তিন দিনে মইজ্জারটেক ও নতুনব্রিজে চকরিয়ার এলাকার ফারুক ও বদরখালীর মফিজ মোবাইল ছিনতাইয়ের শিকার হলেও থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। আবার পথচারি হওয়াতে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হতেও চাননি তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, এসব অপরাধীরা অপরাধ ঘটিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম শহরের পাশের উপজেলায় চলে যান। আর কিছু চক্র মইজ্জ্যারটেকে কাণ্ড ঘটিয়ে শহরের বাকলিয়ায় পাড়ি দেন। নতুনব্রিজের এপার ওপার অনেক ছিনতাইকারীর নিয়মিত ক্রাইমজোন। পুরো শহর জুড়ে রয়েছেই আরও বহু চক্র।
তবে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই নতুনব্রিজের মোড়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। ছিনতাইকারীদের হাতে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু আহত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে কম।
জানা যায়, চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে করে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
মইজ্জ্যারটেক এলাকার পার্শ্ববর্তী শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে মইজ্জ্যারটেকে যাতে কোন ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে এজন্য পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। যেহেতু জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ সব সময় কাজ করছেন।’
জানতে চাইলে সিএমপি বাকলিয়া থানার ওসি মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানে ১৫ জনের অধিক ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ সব সময় সক্রিয়। এবারও নতুনব্রিজে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডিবি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এডি. ডিআইজি) মো. আলী হোসাইন বলেন, ‘ঈদ এলেই ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড বা জনবহুল এলাকায় অভিনব কৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ডিবি পুলিশের টহল জোরদার করা হবে।’