পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু কেনার পাশাপাশি বাজারে দেখা যায় মাংস রান্না করার অন্যতম উপকরণ গরম মসলা কেনার হিড়িক। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে মসলার বেচা-বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে অনেকখানি। সেই সাথে মাংস রান্নার আনুষাঙ্গিক সকল প্রকার মসলার দামও আকাশচুম্বি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, এক মাসের ব্যবধানে সকল প্রকার মসলার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। অনেকেই মনে করছেন বাজারে যথাযথ মনিটরিং না থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা উচিত। অন্যথায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে।
নগরীর বিভিন্ন বাজার—রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি কাঁচা বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গরম মসলার পাশাপাশি দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে সবজি বাজারেও।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিসের সাথে বাজারের এমন বাড়তি দাম নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতি কেজি এলাচ বর্তমানে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, তবে সরেজমিনে বাজার ঘুরে তার কথার সাথে বাজার দরের কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি।
রিয়াজুদ্দিন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, ১০ দিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি এলাচ কিনেছি ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। শুধু এলাচ নয়, দাম বেড়েছে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি ও গোলমরিচেরও। ৭ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি মসলায় দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন মসলার আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে মসলার বাজারে।
রিয়াজুদ্দিন বাজারের খুচরা ব্যাবসায়ীরা জানান, আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে মসলা কিনছি। এ কারণে খুচরা বাজারে খানিকটা বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
দেশে আট ধরনের গরম মসলার চাহিদা সব চাইতে বেশি। এগুলো হলো এলাচি, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জায়ফল, জয়ত্রী ও তারকা মৌরি বা তারা মসলা। এসব মসলার বেশির ভাগই আসে দেশের বাইরে থেকে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়ছে এসব মসলার উপর।
বাজারে জিরার বর্তমান দাম কেজি প্রতি ৯২০ থেকে ৯৫০ টাকা। কেজি প্রতি প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে লবঙ্গের দাম। বর্তমানে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লবঙ্গ। প্রায় ৮০ টাকা বেড়ে গোল মরিচের বর্তমান বাজার দর কেজি প্রতি ৬৩০ টাকা। এছাড়াও ৩৭৫ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া দারুচিনির বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪০০ টাকায়। আদা বিক্রি করা হচ্ছে ২৭৫ টাকা দরে, গত এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকায়। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ধনিয়ার দাম প্রতি কেজি ২৪০ টাকা।
এদিকে নগরীর পড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে মসলার লাগামহীন দামে ক্রেতাদের নাভিঃশ্বাস। যে যেমন পারছে সে দামেই বিক্রি করছে মসলা। ক্রেতারা বলছেন, পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে কোনো প্রকার তদারকি না থাকায় লাগামহীন মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন তারা।
এছাড়াও কাঁচা বাজারে পণ্যের দাম অনেকটাই উর্ধমূখী। প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে কাঁচা মরিচের দাম। নগরীর কাজির দেউরি বাজারে কাঁচা মরিচের বর্তমান মূল্য ২৮০ টাকা।
কাজির দেউরি বাজারের কাদের নামের একজন ব্যবসায়ি বলেন, সাত দিন আগেও মরিচের দাম অনেক কম ছিল। তবে পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়া ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মরিচের দাম আরো কিছুটা বাড়তে পারে।
এছাড়াও দাম বেড়েছে ডিম, শসা, টমেটোসহ অন্যান্য পণ্যের। বয়লার মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন প্রতি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। সোনালী মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে দুই ধরনের টমেটো পাওয়া যাচ্ছে। দেশি টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
ভোক্তারা বলছেন, এইভাবে দাম বৃদ্ধি পেতে থাকলে একসময় আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।
আলাউদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, চার জনের পরিবারে একমাত্র আমি উপার্জন করি। যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে আমাদের অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে থাকতে হয়। অল্প বেতনে ঘর চলে না, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতি নিয়তই বাড়ছে। সরকারের উচিত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হওয়া। যাতে আমরা একটু ভালো ভাবে থাকাতে পারি।