কক্সবাজারের ঈদগাঁওর ফুলছড়ি নদীর বুকে ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে উত্তর গোমাতলী রাজঘাটের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, অফিস, কবরস্থান ও চলাচলের পথ। পোকখালী ইউনিয়নের শেষ সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে চলা নদীগর্ভে ইতোমধ্যে রাজঘাটের মুক্তিযোদ্ধা পাড়ার বেশ কিছু পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। যার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নদীর বুকে শোভা পাচ্ছে নারকেল গাছ।
তবে, ক্রমে বিলীন হতে থাকা গ্রামটি রক্ষায় প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)- এমনটি জানিয়েছেন পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রফিক আহমেদ।
উত্তর গোমাতলীর লবণ ও মৎস্য ব্যবসায়ী রিদুয়ানুল হক বলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁওর উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়ন সাদা সোনা খ্যাত লবণ ও কালো সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদনশীল এলাকা। এ ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে গ্রীষ্মে লবণ ও বর্ষায় ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন করা হয়। এসব শস্য উৎপাদন করে দেশে লবণের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাগদা চিংড়ি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। ইউনিয়নের উত্তর ও পশ্চিমাংশ নদীদ্বারা বেষ্টিত। উত্তরে ফুলছড়ি নদী, পশ্চিমে মহেশখালী চ্যানেল। তাই ঝড়-জলোচ্ছাসে বাঁধের ভাঙ্গা-গড়ায় জীবন চলে এখানকার মানুষের।
তিনি আরো বলেন, দুই মৌসুমে লবণ-চিংড়ি উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতিতে যে পরিমাণ অবদান রাখা হয়- সেভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন গোমাতলীতে হয়নি বললেই চলে। যাতায়তে এখনো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এতদঞ্চলের মানুষের।
পোকখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও গোমাতলীর রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, নব্বই দশকেও বাণিজ্যিক ভাবে যাতায়তে জমজমাট ছিল রাজঘাট জেটিঘাট। এখান দিয়ে প্রসেসিং করা বাগদা চিংড়ি, ইসলামপুর শিল্প এলাকায় লবণ সরবরাহ করা হতো। এসব বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে জেটির আশপাশে তিন ডজনেরও অধিক দোকান-পাট, বাণিজ্যিক অফিস বিদ্যমান ছিল। সকাল-সন্ধ্যা জমজমাট থাকতো ঘাট ও দোকান-পাটগুলো। জেটি দিয়ে কক্সবাজার কঁস্তোরাঘাট জেটিতে নিয়মিত যাতায়ত করতো সার্ভিস বোট। কিন্তু ভাঙ্গনের কবলে পড়ে জেটির আশপাশের দোকান, বাড়িঘর, বাঁধ কাম চলাচলের পথ ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়েছে। ধীরে বিলীন হয়েছে কবরস্থানের অংশও। এখন জেটিঘাটটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষায় পূর্ণিমা-অমানিশার জোয়ার, ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছাসে এ গ্রামের বাড়িঘর ডুবে, রাস্তাঘাট উপচে পানি ঢুকে লোকালয়ে। অথচ ঈদগাঁওর সীমান্ত ঘেঁষা এ গ্রামটিতে ৭জন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার বাস। নানা তদবিরের পর অবহেলায় থাকা গ্রামটি রক্ষায় এ প্রথম কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গ্রাম রক্ষাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকমাম এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন জানান, রাজঘাট আমাদের পাশের ঐতিহ্যময় একটি গ্রাম। একাধিক প্রাকৃতিক দূর্যোগে গ্রামটির নদীপাড়ের অসংখ্যবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সম্প্রতি কবরসহ কবরস্থানের বেশকিছু অংশ নদী গিলে খেয়েছে। যা আছে, তা যেন আর নদীগর্ভে না যায়- সেই লক্ষ্যে প্রকল্প দিয়েছে পাউবো কক্সবাজার। ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ, ডাম্পিং এবং জিও টিউবের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। চলতি মাসেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
পাউবো কক্সবাজারে নির্বাহি প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, গোমাতলীর রাজঘাট মুক্তিযোদ্ধা গ্রামের ‘রাজঘাট কবরস্থান হতে মরহুম জাফর আলম’র বাড়ি পর্যন্ত ৮০ মিটার দুই প্যাকেজে ১৬০মিটার বাঁধ তৈরীর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পে রয়েছে জিও ব্যাগ ডাম্পিং, জিও টিউব, বল্লি স্থাপন (গাছ দিয়ে বিশেষ রক্ষাকবজ তৈরী), বালি ফিলিং ও মাটির কাজ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর হতে শুরু হওয়া কাজ চলতি মাসে (ডিসেম্বরে) শেষ হবে। প্রকল্প সঠিক ভাবে শেষ করা গেলে রাজঘাট কবরস্থান, জেড়িঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করা।