ksrm-ads

১৬ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ঈদে লাখো পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

স্বভাবতই পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পর্যটন মৌসুম সচল থাকে। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ই বৈশাখ শুরু হয়। সেই সময়ে পর্যটন জোনে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়। তখনও পর্যটকে ভরে থাকে কক্সবাজার। কিন্তু চলতি সময়ে ২ এপ্রিল হতে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। ফলে এবারের পর্যটন মৌসুম শেষ হয়েছে মূলত মার্চেই। একদিকে রমজান অপরদিকে তীব্র তাপদাহে পর্যটক শূন্যতায় রয়েছে কক্সবাজার। এতে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটক নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। সামনে আসছে বর্ষাকাল। তাই আগামী পর্যটন মৌসুম পর্যন্ত কক্সবাজার লোকারণ্য হবার সম্ভাবনা নেই।

শুক্রবার থেকে টানা ছয়দিন সরকারি বন্ধ। এরমধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। রোববার মে দিবসের বন্ধ। সবমিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি। এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুইদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের ছুটির সাথে সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা নয়দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল সপ্তাহিক ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া চাকরীজীবিরা ফিরবেন ৮ মে। এসময়ে অনেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পারেন এমনটি ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।

তবে, অন্য সময়ের মতো আগাম বুকিংয়ের তোড়জোড় নেই বলে দাবি করেছেন তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপনন নির্বাহি ইমতিয়াজ সুমেল। তিনি বলেন, টানা ৯ দিনের ছুটি থাকলেও ৪-৬ মে বুকিং হয়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের প্রায় তারকা হোটেলে একই অবস্থা। অথচ অন্য সময়ে টানা তিন থেকে পাঁচদিন বন্ধ পড়লেও বুকিংয়ের ফোন রিসিভ করতে করতে হাপিয়ে উঠতে হতো। এখন সেই ব্যস্ততা নেই।

একই কথা বললেন সী নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজীও। তিনি বলেন, মৌসুমে এমন বন্ধ পড়লে গ্রুপ এবং ইন্ডিভিজ্যুয়েল বুকিং হতো গেস্ট হাউজগুলোতে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এ ছুটিতে সেই চাপ নেই বললে চলে। যা কল আসছে তা স্বাভাবিক। এরপরও ধারণা করা যায়, ৪-৭ মে পর্যন্ত লাখো পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করবেন।

সেই আশায় পর্যটক বরণে তৈরি হচ্ছে পর্যটন নগরীর আবাসান ও খাবারের ঘরগুলো। চলছে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এক মাস সময় পেয়ে অনেক হোটেল সংস্কার কাজও সেরে নিয়েছে। তারাও ঈদের পর পর্যটক সেবা দিতে তৈরি হয়েছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-হকাররাও। মাস দেড়েক ধরে সুনসান নিরবতায় থাকা সৈকত জুড়ে কোলাহল মুখর পরিবেশের আশায় সবার যেন পূর্ব প্রস্তুতি এখন কক্সবাজারজুড়ে। ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টে প্রায় দেড় লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। টানা বন্ধে কয়েকদিন একটু বেশি চাপ থাকবে অন্য দিনগুলোতেও পর্যটক উপস্থিতি মোটামুটি থাকবে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক আসবে এমনটি ধরে নিয়ে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি ঈদের আগে আগাম বুকিং আরো বাড়বে। পর্যটকরা অনলাইন বা মুঠোফোনে বুকিং দিয়ে আসলেই সবচেয়ে ভালো।

তিনি আরো বলেন, বৈশাখ মাস একটু গরম বেশি। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত হলে গরমের তীব্রতা কমে। ঈদেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাবাসে দেখেছি। তেমনটি হলে তা পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য হবে রহমতের বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঠান্ডায় পর্যটকরা আরামে ঘুরতে পারেন।

কলাতলীর স্বাধীন বাংলা রেস্তোরাঁর পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, রমজানে কক্সবাজার পর্যটক শুণ্য ছিল বলা চলে। এসময় রেস্তোরাঁর কিছু ডেকোরেশন ও রংয়ের কাজ করা হয়েছে। অন্যরাও হোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলো পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজ চালাচ্ছে। সবাই রেস্তোরাঁগুলো কমবেশি সাজাচ্ছে।

সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, মার্চের শেষ সময় হতে কক্সবাজার পর্যটক শূণ্য থাকায় গত মাস-দেড়েক কর্মচারীর বেতনও জোগাড় করতে পারিনি। ঈদের ছুটিতে পর্যটক আগমণ বাড়লে ব্যবসা ভালো হবার আশা করছি।

জেলা পরিষদের ছাতা মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের জন্য দোকান গোছাতে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকারেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় ্রসৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষনিক টহল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে- সেটি বিবেচনায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছ। সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঈদে টানা ছুটি পড়েছে, কিন্তু গরমও পড়ছে বেশি। এরপরও পর্যটক সমাগম আগের মতো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটক সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করেছি, যেন পর্যটকেরা ভালো সেবা পায়। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করতে সৈকতে এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে।

উল্লেখ্য, গত দুই বছর করোনার কারণে দুই ঈদুল ফিতর ও আযহার ঈদও ছিল বিধিনিষেধের আওতায়। করোনা পরবর্তী এবারের ঈদে বালুচর ও কক্সবাজার লোকারণ্য থাকবে সেই আশা সকলের।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ