ksrm-ads

১৯ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ঈদে ৩২ আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রী

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের যানবাহন সুবিধা দিতে আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। আসনসহ আড়াই লাখ টিকেট বিক্রির টার্গেটের পাশাপাশি রয়েছে ২০ ভাগ তথা ৫০ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রির কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। ৫দিন ব্যাপী অগ্রিম টিকেট বিক্রির কার্যক্রমে ৫০ ভাগ মোবাইলে ৪০% কাউন্টার থেকে অগ্রিম বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বাকি ১০% টিকেট ভিআইপি ও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। অনলাইনে বিক্যাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্নভাবে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে টিকেট ক্রয় করা যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, এবার অনলাইনে টিকেট বিক্রির সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়ায় কালোবাজারীরাও পোয়াবারো হবে। যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট প্রতি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ভোগান্তি ও অর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে যাত্রীরা। রেলের উভয় জোনে মোট ৩২টি আন্তঃনগর, ২টি চট্টলা এক্সপ্রেস ছাড়াও ৪৪টি মেইল ট্রেন চালু থাকবে যাত্রী পরিবহনে। তবে মেইল ট্রেনের জন্য কোন অগ্রীম টিকেট বিক্রি হবে না।

আরো অবিযোগ রয়েছে, ডিজিটাল এ যুগে কালোবাজারীরাও জিজিটাল চুরি শুরু করেছে। ফলে মোবাইল দোকানদাররাই টিকেট নিয়ে সরাসরি স্টেশনের ফ্ল্যাটফর্মে অবস্থান নিবে টিকেট কালোবাজারীতে। তবে স্টেশন থেকে ৫ দিনব্যাপী অগ্রিম টিকেট বিক্রির এ কার্যক্রমে এক যাত্রী ৪টির বেশি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন না। এমনকি পৃথকভাবেও একজনে ৪টি টিকেট ক্রয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে স্টেশন ম্যানেজারকে আবেদনের মাধ্যমে অতিরিক্ত টিকিট ক্রয়ের সুবিধা নিতে পারবেন যাত্রীরা। কিন্তু অগ্রিম টিকিট ফেরত বা পরিবর্তন করবেনা কর্তৃপক্ষ। ঈদ উপলক্ষে ৫টি জংশন স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, মোবাইলে ৫০% অগ্রিম টিকেট বিক্রির পক্রিয়া শুরু করায় আবারো হয়রানির শিকার হবে যাত্রীরা। কারন কালোবাজারীর সঙ্গে এবার অসাধু মোবাইল দোকানদাররাও যুক্ত হয়েছে। রেলের উভয় জোনের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ২৩ এপ্রিল থেকে আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে প্রায় দেড় লাখ আসনসহ টিকিট বিক্রির টার্গেট নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অগ্রিম টিকিটে যাত্রা শুরু করবে ২৭ এপ্রিল থেকে ০১ মে পর্যন্ত যাত্র করবে। তবে ২ মে’র টিকেট বিক্রিও বন্ধ রয়েছে চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। ঈদে না নাড়ির টানে যেতে সড়ক ব্যবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে অন্য বছরগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী। অন্যবারের মতো এবারও ট্রেনের উপর চাপ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে প্রায় সাড়ে ৫০ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি যাত্রীদের সুবিধার্থে করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু যাত্র দিনে যা হবে ভোগান্তি।

অপরদিকে, কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিন ও কোচ সঙ্কটের কোন কারণ নেই এবারেরর ঈদ যাত্রায়। এছাড়া ঈদের আগের দিন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জের মধ্যে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু থাকবে। এসব স্পেশাল ট্রেনে রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভ্রমনের সুযোগ রয়েছে। এদিকে, ৩২ টি আন্তঃনগর ও চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রায় ৫০ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির কর্মসূচী ঈদ যাত্রায় আরামদায়ক ভ্রমনের পরিবর্তে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠবে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ স্টেশনের কাউন্টার সূত্র জানিয়েছে, যাত্রীদের চাপের মুখে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী সেবার মান ঠিক রেখেই ট্রেন পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজর টিকেট বিক্রি হবে। এছাড়া, স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে ঈদযাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে। চোরাকারবারী ঠেকাতে বিশেষ টিম কাজ করছে জিআরপি’র নেতৃত্বে।

চট্টগ্রাম স্টেশন কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ছাড়াও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম চলবে। এছাড়াও ট্রেন ছাড়ার একঘন্টা আগ থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবে প্রতিদিনের নির্ধারিত টিকিট বিক্রি ও অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলাকালীন সময়ে বিক্রি করা হবে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির জন্য এ ৫টি স্টেশনে রমজান মাসের কারনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যাত্রীদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহের জন্য কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে, মিটারগেজ লাইনে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় ৪২টি এক্সপ্রেস, মেইল, লোকাল ট্রেন চলাচল অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রাম স্টেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে তিনটি রুটে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন সপ্তাহিক বন্ধ ছাড়াই চলাচল করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ৫টি আন্তঃনগর ট্রেন। আর সিলেটের দিকে যাবে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস। শুধুমাত্র মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টিকেট বিক্রি করা হবে। এরমধ্যে মোবাইলে ও স্টেশন থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ৫ দিনে আসনসহ টিকিট বিক্রি হবে ৬ হাজার ২৫৮টি, মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হবে ৪ হাজার ৫০১টি, মহানগর গোধুলী এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হবে ৬ হাজার ৫৫টি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটে বিক্রি হবে প্রায় ৬ন হাজার ও তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হবে ৫ হাজার ৮৪৫টি। সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হবে ৪ হাজার ৬৪৮টি, উদয়ন এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ৬৬২টি। তবে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে ৫ হাজার ৪০টি। তিনটি রুটে সাতদিনে আসনসহ সর্বমোট টিকিট বিক্রি হবে ৩৭ হাজার ৯টি। চোরাকারবারীদের রোধ করতে র‌্যাব, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক পাহারা থাকবে।

ঢাকা স্টেশন কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২৩ এপ্রিল থেকে মোবাইলে ও স্টেশনের কাউন্টারে ৫ দিনব্যাপী রেল স্টেশন থেকে ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রমে ঢাকা ও বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ২৭টি আন্ত.নগর ট্রেনের আসনসহ টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে শনিবার। সে অনুযায়ী চট্টগ্রামগামী সুবর্ণা এক্সপ্রেসের আসনসহ ৬ হাজার ২৫৮টি টিকিট, মহানগর প্রভাতীর ৬ হাজার ৫৫টি, মহানগর গোধুলীর ৪ হাজার ৫৩৬টি, তূণা নিশিতা এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৮৪৫টি।

এদিকে, পঞ্চগড় গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের সাড়ে ৬ হাজার, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৪৯৩টি, উপবন এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৪৪০টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৭৯৪টি টিকিট বিক্রি হবে। উত্তরবঙ্গের দিকে, বাহাদুরাবাদ ঘাটের তিস্তা এক্সপ্রেসের ৬ হাজার ৭২০টি ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ১২৪টি। তারাকান্দিগামী অগ্নিবীনা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৬৩টি ও যমুনা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৬৩টি, কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্ধুর প্রভাতীর ৪ হাজার ২৬৩টি, এগার সিন্ধুর গোধুলীর ৪ হাজার ২৬৩, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ২৫৭টি, চিত্রা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ৪১০টি টিকেট বিক্রি হবে। নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ২০৮টি, দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের ৩ হাজর ৪৯৩টি, নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৯৮টি, দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৯৩৪টি, লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৮০টি, রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৫৮৬টি ও পদ্মা এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৪১১টি আসনসহ টিকিট বিক্রি হবে।

তবে ঈদ উপলক্ষ্যে মোবাইলে ও ঢাকা স্টেশনের কাউন্টার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। মোবাইলে ৫ দিনের অগ্রিম টিকিট বাবদ ১ লাখ ৩ হাজার ১৯৪টি টিকিট বিক্রি হবে। একইভাবে এসব ট্রেনে ঢাকামুখী টিকিট বিক্রি হবে আরও ১ লাখ ৩ হাজার ১৯৪টি। এছাড়াও ঈদের আগের দিন ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে ৩ হাজার। বরাবরের মত এবারও কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকিট যাত্রীদের সুবিধার্থে বিক্রি করবে।

সিলেট স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে মোবাইলে ৫০ ভাগ অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। সিলেট থেকে ঢাকাগামী তিনটি ও চট্টগ্রামগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে শনিবার। সে অনুযায়ী ৫ দিনের অগ্রিম টিকিট হিসেবে ঢাকাগামী পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে ৮৪০টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি, উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি টিকিট বিক্রি হবে। ৫ দিনে সর্বমোট টিকিট বিক্রি হবে ৪ হাজার ২শটি।

রেলের আরেকটি সুত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে রেল কর্মচারীদের অর্থাৎ যাদের আন্তঃনগর ট্রেনে পাশের মাধ্যমে চলাচলের সুবিধা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৫ দিনে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে ৫০টি, মহানগর গোধুলী ট্রেনে ৭১টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হবে। সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে ৮৯টি, উদয়ন এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও ৮৯টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হবে। এছাড়া চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৮টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হবে।

আরও পড়ুন