কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলায় গত ৬ দিন ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ আফরোজা বেগমের মরদেহ অবশেষে উদ্ধার হয়েছে। স্বামীর বাড়ির আঙ্গিনার মাটি খুঁড়ে শনিবার (১৭ অক্টোবর) মধ্যরাতে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল হাই। তাকে হত্যার পর মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছেন ওসি।
নিহত আফরোজা (২৫) উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পূঁইছড়া গ্রামের মো. ইসহাকের মেয়ে ও চকরিয়ার উপকূলীয় বদরখালী কলেজের খণ্ডকালীন প্রভাষক রাকিব হাসান বাপ্পীর স্ত্রী। বাপ্পী উত্তর নলবিলার হাসান বশিরের ছেলে।
ওসি বলেন, গত ১২ অক্টোবর শ্বশুর বাড়ি থেকে আফরোজা বেগম ‘নিখোঁজ’ হন। এ ঘটনায় তার বাবা মোহাম্মদ ইসহাক বাদী হয়ে রাকিব হাসান বাপ্পীকে প্রধান আসামি করে চার জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
স্বজনদের পাশাপাশি পুলিশ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েও আফরোজার সন্ধান পাচ্ছিল না। শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত নলবিলার আশপাশের পাহাড়ের পাদদেশে খোঁজা হয় আফরোজাকে। না পেয়ে পুলিশ চলে এলেও স্বামীর বাড়ির প্রতি নজর রাখতে গোয়েন্দা লাগানো হয়। রাতে উঠানের মাটি খুঁড়তে শুরু করে স্বামীর বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ এসে শ্বশুরবাড়ির আঙিনায় মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় আফরোজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটি অর্ধ-গলিত হয়ে গেছে।
ওসি আরো বলেন, নয় মাস আগে রাকিবের সঙ্গে আফরোজার বিয়ে হয়। দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। আফরোজার প্রথম স্বামী মারা গেছেন। অন্যদিকে রাকিব হাসান বাপ্পী তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর আফরোজাকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে বাপ্পীর সঙ্গে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর আবারো যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এ নিয়ে আফরোজা ও বাপ্পীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
আব্দুল হাই জানান, আফরোজার ওপর রাকিব অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। এ নিয়ে আগে গ্রামে সালিশও হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত এক বছর পূর্বে বাপ্পীর সাথে আফরোজার বিয়ে হয়। এটি আফরোজার তৃতীয় এবং বাপ্পীর চতুর্থ বিয়ে। বিয়ের পর তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে গত কিছুদিন পূর্বে মামলায় আপোষের সূত্র ধরে স্বামী বাপ্পি স্ত্রী আফরোজাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
গত ১২ অক্টোবর স্ত্রী আফরোজা নিখোঁজ হয় বলে শাশুড়ি রোকেয়া হাসান আফরোজার বাবার বাড়িতে খবর দেয়। সেই থেকে আফরোজা নিখোঁজ ছিল। আর এদিন থেকে স্বামী রাকিব হাসান বাপ্পীও ছিল পলাতক। পরবর্তীতে ১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মহেশখালী থানা পুলিশের সহায়তায় বাড়ির আঙ্গিনায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থা থেকে আফরোজার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ময়নাতদন্তের জন্য আফরোজার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।
বাংলাধারা/এফএস/এএ