নাম ফলক! সরকারি স্থাপনায় ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বা উদ্ভোধনকারীর নামে ফলক প্রতিস্থাপন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এনিয়ে মাঠ পর্যায়ে রাজনীতির ও থাকেনা কমতি। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই ফলক পরিবর্তনের ঘটনাও বহুল আলোচিত। এর মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো অন্তবর্তীকালীন সরকার। বাঁশবাড়িয়া গুপ্তছড়া ফেরিঘাট ছয়জন উপদেষ্টার উপস্থিতি ও ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান উপদেষ্টার উদ্ভোধন ঘোষণার পর ও তাতে নেই কারো নাম। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও তত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাপন করা হয় নামফলক।
উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। সেই সন্দ্বীপ থেকে এবার বাস ছুটবে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে। ফেরিতে চেপে সাগর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের।
সোমবার (২৫ মার্চ) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো ফেরি চলাচল। ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপে যাত্রীবাহী ও মালামালবাহী যানবাহন চলাচলও শুরু হয়েছে। ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনে ছয়জন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত দেখা যায় সরকারি স্থাপনা উদ্ভোধনের সময় সরকার প্রধান কিংবা জাতীয় কোনো নেতা কিংবা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তি বিশেষের নাম থাকে উদ্ভোধনস্থলে থাকা ফলকে। জনগনের টাকায় সরকারি স্থাপনা নির্মানে ব্যাক্তি বিশেষের নাম নিয়ে চলে রাজনৈতিক অপচর্চা। তবে এবার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো এই ঘাট উদ্ভোধনে।
এদিকে, মন্ত্রী পদমর্যাদার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এতলোক একসঙ্গে উপস্থিত থাকলেও ফলকে দেওয়া হয়নি কারও নাম। ফলকে শুধু লেখা ছিল— বাঁশবাড়ীয়া (সীতাকুণ্ড) ও গুপ্তছড়া শুভ উদ্বোধন। ফলকে বাংলা ও ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ’র লোগো দেওয়া হয়।
উপদেষ্টারা যখন ফলক উন্মোচন করছিলেন তখন উপস্থিত অনেকেই কারও নাম না দেখে কিছুটা বিস্মিত হন। পরবর্তী সময়ে নামফলকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ব্যক্তিগত আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান এমন অভিনবত্ব পরবর্তীতে নাম পরিবর্তনের ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। তাই হয়তো এমন প্রচেষ্টা। যা অনেক সম্মানজনক ও বটে।
চারপাশে জলরাশিঘেরা সন্দ্বীপ মাত্র ৭৫০ বর্গকিলোমিটারের একটুকরা ভূখণ্ড। এ অঞ্চলের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার যাতায়াতব্যবস্থার জন্য রয়েছে কুমিরা-গুপ্তছড়াসহ ছয়টি নৌপথ। একটিমাত্র যাত্রীবাহী জাহাজে মানুষ যাতায়াত করতেন এত দিন। পাশাপাশি স্পিডবোট, কাঠের ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার হতো। ঘটত অনেক দুর্ঘটনা। ছিল কাদা মাড়িয়ে হাঁটার দুর্ভোগ। ফেরি চালু হওয়ায় এসব দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেল সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।
জানা যায় সকাল আটটার পর সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পৌঁছায় উপদেষ্টাদের গাড়িবহর। শুরুতেই জেটি ঘাট-১–এ বিআরটিসি বাসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এরপর বাসে উঠে ঘুরে দেখেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর ফেরিঘাট উদ্বোধন করেন তিনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। সকাল ৯টায় উপদেষ্টাদের নিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে ফেরি ছাড়ে। সকাল ১০টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ফেরি পৌঁছানোর পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের স্বাগত জানান। ফেরি থেকে নেমে গুপ্তছড়া ঘাটের নামফলক উন্মোচন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধন রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।
এর আগে ১৯ মার্চ সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া সাগরপথে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়। ‘কপোতাক্ষ’ নামে ফেরিটি দিয়ে এই সেবা চালু হয়। আজ (সোমবার) একই ফেরি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে যাতায়াতে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা রয়েছে। ফেরিতে ৩৫টির মতো যানবাহনের পাশাপাশি ৬০০ জন মানুষ চলাচল করতে পারবেন।
এএস/বাংলাধারা