জে জাহেদ, কর্ণফুলী »
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর এলাকার ব্যস্ততম একটি সড়কের নাম নুরুল উলুম তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসা সড়ক। আজ থেকে প্রায় ৪/৫ মাস আগে এ সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী উদ্বোধনও করেছেন সড়কটি।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এডিপির প্রায় ৫ কোটি টাকার কাজের দরপত্রে পুনরায় এ সড়কের নামে প্রকল্প তুলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ১৭ এপ্রিল এ বিষয়ে স্থানীয়দের পক্ষে কর্ণফুলী শাহমীরপুর এলাকার মো. নাছির উদ্দীন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর ৫নং ওয়ার্ডে নুরুল উলুম তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসা সড়কটি আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরও পুনরায় ৫ কোটি টাকার এডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ লক্ষ টাকার ব্যয়ে এ সড়ক অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
এই সড়কটি পুনরায় তালিকায় দেখে অবাক হন স্থানীয়রা। কেননা সড়কটি আরসিসি দ্বারা সম্পন্ন হয়ে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসীর বোধগম্য হচ্ছেনা কেন এবং কার স্বার্থে একই সড়ক পুনরায় দরপত্রের তালিকায় স্থান পেয়ে মের্সাস শাহমীর এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদার নিয়োগ হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলে বড়উঠানবাসী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এখনো রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট আসলে জানতে পারবো অভিযোগটি সত্য না মিথ্যা।
জানা যায়, উপজেলার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উন্নয়ন তহবিল রাজস্ব/এডিপির আওতায় গত ২৭ মার্চ যে প্রকল্প বাস্তবায়নের দরপত্র প্রকাশ করেন তাতে ১২নং ক্রমিকে নুরুল উলুম তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসা সড়ক আরসিসি দ্বারা উন্নয়নের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। অথচ এ কাজ শেষ হয় বহু আগে। বিগত সময়ে এসব সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলেও কেন একই প্রকল্প বার বার তালিকায় আসছে সে বিষয়ে জানতে চাইলেও উপজেলা পরিষদ সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগের কপি আমি পাইনি। জেলা প্রশাসন থেকেও আমার দপ্তরে কোন ধরনের নির্দেশনা আসেনি। তিনি অভিযোগের অনুলিপিও পাননি বলে জানান।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে বলেন, রাস্তাটি সে সময় বেশী খারাপ হওয়াতে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের উদ্যোগে তখন কাজ করা হয়েছিল কিন্তু এত বড় সড়কের পুরোটা কাজ শেষ করা যায়নি। এখন টেন্ডারের মাধ্যমে পুরো কাজটি সম্পাদন করা হবে তাই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। অর্ধেক অংশের কাজ কোন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে করা হয়েছে এবং কাকে প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী উপজেলাধীন ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে উন্নয়ন তহবিল (রাজস্ব) এডিপি এর আওতায় সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৩৪টি প্যাকেজে প্রায় ৯৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দরপত্র শেষে ঠিকাদারেরা এসব কাজ বুঝে নিয়ে মাঠে কাজ করলেও পুর্বে থেকে সড়কে মেটেরিয়ালস বা ইটের কোন দাম ধরা হয়নি। ফলে ৫ কোটি টাকার কাজে কর্ণফুলী উপজেলা রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ২০/২৫ লক্ষ টাকা।
এদিকে দরপত্র মতে নুরুল উলুম তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসা সড়কটির কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস শাহমীর এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মো. পারভেজ এর কাছে প্রকল্প পরির্দশন করেছে কিনা জানতে চাইলে (সম্পর্কে চেয়ারম্যানের ভাতিজা) তিনি বলেন, ‘এ সড়কের কাজ কে পেয়েছে আমি জানি না, পরে জেনে জানাতে পারব। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক আমি।’ তার এমন মন্তব্য শোনে অনেকে অবাক হয়েছেন। তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের নাম কে ব্যবহার করেছে সেটা প্রশ্নবোধক হয়ে রইল।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর