কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধ্বসে দু’পরিবারে ৫ জন নিহত হওয়ার ১৫ ঘন্টার মাথায় টেকনাফের হ্নীলায় পাহাড় ধ্বসে এবার একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৮ জুলাই) ভোররাত দুইটার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজারপাড়ায় এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাহাড়ি গ্রাম ভিলেজার পাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের ছেলে শুক্কুর, জুবাইর, আবদুর রহিম, মেয়ে কহিনুর ও জাইনবা।
হ্নীলা ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার হোছেন আহমেদ জানান, ছৈয়দ আলমের বাড়ি পাহাড়ের পাদদেশে। পাশে উঁচু পাহাড়। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ থেমে থেমে অব্যাহত রয়েছে। এতে নরম হয়ে রয়েছে পাহাড়ের মাটি। মঙ্গলবার রাতের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের কিছু অংশ ধসে গিয়ে ছৈয়দ আলমের বাড়ির উপর পড়ে। এতে চালাসহ চাপা পড়ে বাড়ির ঘুমন্ত সদস্যরা। মাটির নিচে চাপা পড়ে ছৈয়দ আলমের তিন ছেলে দুই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। সেখান থেকে প্রথমে দুইজন ও পরে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে রাতেই চেয়ারম্যানসহ সবাই ঘটনাস্থলে আসে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, মঙ্গলবার সকালেই উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধ্বসে দু’পরিবারের নারী-শিশুসহ ৫জন এবং হোয়াইক্যং ও মহেশখালীতে স্থানীয় আরো দু’জন নিহত হয়েছেন। এর ১৫ ঘন্টার মাথায় হ্নীলার পাহাড়ি এলাকায় ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি চাপায় একই পরিবারের নারী-পুরুষসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বাকী সদস্যরাও। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটি চরম মর্মান্তিক ঘটনা। পাহাড়ের কিনারা ও উপরে ঝুঁকিতে বাস করা পরিবারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া না গেলে আরো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তার।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে হ্নীলা ইউনিয়নে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। ঘটনাস্থলে পৌছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, উখিয়ার ক্যাম্প-১০ এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহতরা হলো, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১০ এর ব্লক জি/ ৩৮ শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তাদের ছেলে শফিউল আলম(৯), একই ক্যাম্পের মো. ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার(২৫), তাদের ছেলে আব্দুর রহমান (৩) মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা(১)। এসময় আহতরা হলেন, শাহ আলমের মেয়ে নুর ফাতেমা(১৪), ছেলে জানে আলম(৮)।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামশুদ্দোজা নয়ন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, থেমে থেমে চলা ভারী বর্ষণে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বেলা ১০টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক- জি/৩৭ এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের মা-ছেলেসহ দুই, অপর পরিবারে মা-ছেলে-মেয়েসহ তিনজন নিহত হন। প্রথম পরিবারের আহত হয় আরো।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, সোমবার দুপুর ১২ টা হতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৩৩ মিলিমিটার। সাগরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বলবত রয়েছে। আরো দু-তিনদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘটতে পারে পাহাড় ও ভূমি ধ্বসের ঘটনাও।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, শ্রাবণের অতিবর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণে ঢল নেমেছে জেলার তিন প্রধান নদী ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, চকরিয়ার মাতামুহুরি ও রামুর বাঁকখালীতে। বান ও বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়েছে জেলার নয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও সমতল। শত শত বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে জলবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারে রান্নাও বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধ্বসে এবং বানের পানিতে ভেসে এ পর্যন্ত ৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারিদের সরিয়ে নিতে মাইকিং ও অভিযান চলছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর