কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারে ওমরা ফেরত এক বৃদ্ধার শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। ঢাকায় পাঠানো নমুনার পরীক্ষার রিপোর্টে এ ভাইরাসের উপস্থিতির তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক (সুপার) ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। আক্রান্ত বৃদ্ধা ভর্তির পর থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিশেষ কেবিনে রয়েছেন। তাকে বিশেষ এ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
আক্রান্ত মুসলিমা খাতুন (৭৫) গত ১৩ মার্চ ওমরা হজ্ব শেষে সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। তিনি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী দক্ষিণপাড়ার মরহুম রশিদ আহমদের স্ত্রী ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমানের মাতা।
পরিবারের বরাত দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সর্দি, জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে ১৮ মার্চ সদর হাসপাতালে আনা হয় মুসলিমা খাতুনকে। তার লক্ষ্যণগুলোতে করোনা সন্দেহ হওয়ায় তাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে নেয়া হয়। তখনো তিনি ওমরা ফেরত সেটা গোপন রাখেন। কিন্তু সুস্থতার লক্ষণ না দেখায় অনেক জোরাজুরির পর রোগীর পরিবার স্বীকার করে যে, মুসলিমা ওমরা থেকে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শরীরের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য ২২ মার্চ ঢাকার আইইডিসিআর এর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বেলা ২টার দিকে তার পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতালে পৌছে। রিপোর্টে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ এসেছে। সেই হিসেবে মুসলিমা খাতুন জেলায় করোনা সনাক্ত হওয়া প্রথম রোগী।
কক্সবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ওমরা থেকে ফেরার পর পরিবারের প্রায় সবাই অসুস্থ মায়ের সংস্পর্শে এসেছিলাম। এ কারণে সবাই আশঙ্কার মুখে রয়েছি। এ কারণে পরিবারের সবাই হোম কোয়ারাইন্টাইনে রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, মায়ের শরীরে যেহেতু করোনা পজিটিভ এসেছে বলেছে, সেহেতু সরকারি নিয়মে যেভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হবে আমরা তার উপর আস্থাশীল থাকবো। তবে, অনুরোধ থাকবে মাকে যেন বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, মুসলিমা খাতুনের করোনা পজেটিভ আসার খবর প্রচারের পর তাকে সেবা দেয়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক-নার্স ও ক্লিনারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তারা ১৮ মার্চের পর থেকে পালা করে করোনা আক্রান্ত মুসলিমার চিকিৎসা সেবাই দায়িত্বপালন করেছেন। ২২ মার্চ ঢাকাস্থ আইইডিসিআরে পাঠানো নমুনায় পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজেটিভ বলে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ফলাফল আসায় তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে।
তবে, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশে নারাজ হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন বলেন, কয়জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া যাবে? ১৩ মার্চ তিনি (মুসলিমা খাতু) সাধারণ পরিবহনে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বাড়ি এসেছেন, বাড়িতে ৫দিন অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাত হয়েছে। আবার তথ্যগোপন করে চিকিৎসা নেয়ায় অনেক চিকিৎসক-নার্স ও ক্লিনার পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ছাড়া ওনার কেবিনে গিয়ে সেবা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, তবে আমরা সাধ্যমতো নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে সেবা অব্যাহত রাখছি। সবার প্রতি অনুরোধ, করোনা আক্রান্ত হওয়া দোষের কিছু নয়, চিকিৎসকদের কাছে খোলাসা তথ্য দিয়ে সেবা নিন। নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও নিরাপদ রাখুন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম