মুক্তিপণ দেয়ার পরও মেলে না মুক্তি। স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে তারই সামনে স্ত্রীর উপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। কক্সবাজারে ভয়ঙ্কর এক অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালানোর পর এমনই সব তথ্য পেয়েছে র্যাব-১৫। অপহরণকারীদের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বন্দী নারীসহ পাঁচ অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্যরা। এসময় অপহরণের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ মে) র্যাবের একটি দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের আটক ও উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
আটককৃতরা হলো—চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০), কক্সবাজারের পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডস্থ নতুন বাহারছড়া এলাকায় মো. ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না (৩০) এবং মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ মে কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম। পরে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের।
কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও ভয়ঙ্কর। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকে চক্রের সদস্যরা। স্বামীর ওপর চলতে থাকে মধ্যযুগীয় অমানবিক বর্বর নির্যাতন।
বেদম মারধরের পাশাপাশি চাহিদামতো মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হলে নিরুপায় হয়ে স্বজনরা বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার তাদের উদ্ধার করে র্যাব।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, কক্সবাজার কেন্দ্রিক অপহরণ-মুক্তিপণ সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে র্যাবের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা এ অভিযান পরিচালনা করেছি।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, তদন্তের স্বার্থে যা এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ চক্রের অপরাপর সদস্যদেরও শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। কক্সবাজারে অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন পুলিশ কর্মকর্তা শামীম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চক্রের প্রধান ইকবাল পারভেজ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র্যাবের নিকট ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি চাকরিও হারান তিনি। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এসআই (বরখাস্তকৃত) ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭-৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন অপহরণ বাণিজ্যের রমরমা এ সিন্ডিকেট।
চক্রের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের স্বজনদের নিকট ফোন করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করত। প্রত্যাশামাফিক টাকা না পেলে আটককৃতদের দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। আটকাবস্থায় অপহৃত নারীদের যৌনদাসী হিসেবেও ব্যবহার করত।
আটককৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।