কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলকে এবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাওয়ার আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ আবেদন করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রহিম।
পিপি জানান, এই দুই জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। একই সাথে দুই জনকে ভূমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় (দুদক, সজেকা, চট্টগ্রাম-২ এর মামলা নং-০১, তারিখ: ১০/০৩/২০২০) গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
এর আগে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করার অভিযোগে দুদকের করা অপর মামলায় গত ২৮ মার্চ গ্রেফতার হন কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ও কক্সবাজার পৌরসভার কর্মচারী দিদারুল ইসলাম। মিয়ানমারের নাগরিকদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তার অভিযোগে এ পযন্ত ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা করেছে দুদক।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ জন পুলিশ কর্মকর্তা, দুই জন ইউপি চেয়ারম্যান, কক্সবাজার পৌরসভার সাত জন কাউন্সিলর, একজন আইনজীবী এবং দুই জন ইউপি সচিবও রয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন শাখায় দুর্নীতির অভিযোগে র্যাবের হাতে নগদ ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকাসহ গ্রেফতার সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানসহ সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটির তদন্ত করছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন। মামলার তদন্তকালে ভূমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত দুর্নীতিতে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলের নামও উঠে আসে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনেক তথ্যপ্রমান পায় দুদক। ওই মামলায় এ পর্যন্ত সার্ভেয়ার দালালসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে গ্রেফতার হওয়া ভূমি অধিগ্রহন শাখার দালাল মো. সালাহ উদ্দিন ও কমর উদ্দিন রিমান্ডে দুদকের কাছে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। কাউন্সিলর মিজানুর বিভিন্ন সময় সালাহ উদ্দিন ও কমর উদ্দিনের কাছ থেকে প্রায় ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা কমিশন ও ঘুষ বাবদ গ্রহন করেছেন। বিমান বন্দর প্রকল্প এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ও দালালের কাছ থেকে শতকরা ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অনেক তথ্য প্রমান পেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র আরও জানায়, একই মামলায় গ্রেফতার হওয়া দালাল মো. সেলিম উল্লাহর দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠেছে এসেছে সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলের নাম। তিনি এলএ অফিসের দালালদের অর্থ বিনিয়োগ করতেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। নোবেল ও তার স্ত্রী শামীমা ইয়াছমিনের নামে এ পর্যন্ত ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৮ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১১ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৭৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে। ওই সম্পদ তিনি ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। উল্লেখিত সম্পদ ক্রোক বা ফ্রিজপূর্বক দুর্নীতি দমন কমিশনকে রিসিভার নিয়োগ করার জন্যও আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে মেগা প্রজেক্ট চালুর পর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, এডিসি জাফর আহমেদ এবং বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এ মামলায় কারান্তরিণ হন সাবেক ডিসি ও এডিসি এবং জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও দালালরা।
বাংলাধারা/এফএস/এআর