ksrm-ads

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

ভারি বর্ষণ

কক্সবাজারে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল, ঢলে ভেসে শিশুসহ নিখোঁজ ৩

Cox

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, বাঁকখালী, মাতামুহুরী নদীতে। বৃহস্পতিবার ভোররাত হতে নদীর দুই তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ঢলের পানি। এতে নদীর তীর ও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অগণিত পরিবার। আতঙ্ক দিন কাটছে অসংখ্য মানুষ।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে একটি ট্রেনও ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটকসহ যাত্রীরা।

পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমএ মনজুর বলেন, বুধবার সন্ধ্যা হতে মোষলধারে বৃষ্টি নামে। সারারাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের নিম্নাঞ্চল ও অলিগলি। ভোগান্তিতে পড়ে অনেকে।

এদিকে, অবিরাম ভারি বর্ষণ থাকায় যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া-পেকুয়ায়। প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত দু’শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন জনপ্রতিধিরা। সবচেয়ে বেশি পানিবন্দি এলাকা রামু ও ঈদগাঁও উপজেলা। কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়া হাইওয়ের অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

প্লাবিত এলাকায় বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো পরিবার। অনেক বাড়িতে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন গৃহকর্তারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে এই পর্যন্ত শিশুসহ ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে শিশু জুনায়েদ, রাস্তা পার হতে গিয়ে গর্জনিয়ার ছুমছড়ির এলাকার আমজাদ একই এলাকার রবিউল আলম নিখোঁজ রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ফেনী ও কুমিল্লা অংশ পানির নিচে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টিকিটের ভাড়া ফেরত দেয়া হয়েছে।

রাম উপজেলা কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নোমান জানান, টানা বৃষ্টির কারণে বুধবার সন্ধ্যা হতে তিন ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এলাকার রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতেও। তাৎক্ষনিক সহায়তার কোন ব্যবস্থা প্রশাসনের ছিল না, এটা দুঃখজনক। ভোগান্তির চেয়ে সরকারি সহায়তা নগণ্য।

সদরের পিএমখালীর ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহাগ জানান, গত রাত থেকে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পিএমখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সদর ইউজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, বাঁকখালী নদীতে ঢল নামায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

ঈদগাঁও উপজেলার জালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনি বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলেশ্বরী নদীর একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরেছে। সেসব স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ঈদগাঁও বাজারসহ প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে আমন ধান ও সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীবিধৌত বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাতামুহুরী নদীতীরের ১ নম্বর গাইডওয়ালও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীতে পানির চাপ বাড়তে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে তীরের গাইডওয়াল ভেঙে ব্যাপকভাবে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকতে পারে।

এ ছাড়া নানা কারণে ছড়াখালগুলো ভরাট হওয়ায় দ্রুত ভাটির দিকে পানি নামতে পারছে না। এর ওপর অব্যাহতভাবে চলছে ভারি বর্ষণ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলোও চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখনো বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে না ঢুকলেও যেকোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুদেস্তারীনা জানান, পার্বত্য অববাহিকার বাঁকখালী নদীতে নামা পাহাড়ি ঢলের পানি বুধবার বিকেল থেকে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। এতে উমখালীসহ অন্তত ১০ টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

চকরিয়ার বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী জামিল মোরশেদ বলেন, ‘মাতামুহুরীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেই প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। এ অবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে কোনাখালীর কাইজ্জারদিয়া, সিকদার পাড়ার বেড়িবাঁধ। একইভাবে খুটাখালী ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধগুলোর যেসব পয়েন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে সেসব পয়েন্টে লোক নিয়োগ করে জরুরি কাজ করা হচ্ছে। যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে।

বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, এবারের অতি বর্ষণের কারণে ইতিমধ্যে ইউনিয়নগুলোর নিম্নাঞ্চল কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সেই সাথে আমন ধানের চারা এবং রকমারি সবজিক্ষেতও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কৃষিক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জুলাইয়ের বন্যায় আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে বড় লোকসান হয়েছিল কৃষকদের। এরপর ক্ষতি কাটিয়ে আবারো বীজ বুনেছে কৃষকরা। এখন সেই চারা তুলে রোপণের সময়। কিন্তু একমাসের ব্যবধানে তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়ে বীজতলা এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’একদিনে যদি পানি না নামে তাহলে এবারের চারাও আর কাজে লাগাতে পারবে না কৃষকরা।

ঈদগাঁওর ভোমরিয়াঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা কামাল জানান, পশ্চিম ভোমরিয়াঘোনা এলাকায় ভঙ্গুর বাঁধের কারণে সহজে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এবারের প্লাবণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বুক সমান পানিতে ডুবেছে এলাকার বসতবাড়ি- সড়ক-উপসরক। দুমাসের মাঝে একাধিকবার এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে স্থানীরা।

গর্জনিয়া এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, বন্যায় ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে রোপণের কয়েকদিন পরে আবারও পানিতে ডুবে যায়।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানান, ব্লক অনুযায়ী সার্বিক চিত্র সংগ্রহ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতির চিত্র পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আমন ধান ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট সকাল ৯টা হতে ২২ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২১৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, বন্যার পূর্বাভাসের বিষয় জানিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় বসবাসকারী লোকজন যাতে নিরাপদে সরে যায় সে জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন