কক্সবাজারে চলতে থাকা ভারী বর্ষণে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও জেলা সদরে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন করে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মাঝে ক্যাম্পে বাবার সাথে দুই শিশু সন্তান আর কক্সবাজারে মায়ের সাথে দুই শিশু কন্যার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে উখিয়ার পালংখালি হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের লাগোয়া দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় পৃথক এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
টানা বর্ষণে জেলায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহর-গ্রামে অনেকের ঘরে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে বাসাবাড়ি, নিম্নাঞ্চল।
ক্যাম্পে নিহতরা হলো- উখিয়ার পালংখালি ক্যাম্প ১৪ ই-২ ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রহিম, তার দুই শিশুর সন্তান আব্দুল হাফেজ (১০) ও আব্দুল ওয়াহাদ (৪)।
ক্যাম্প মাঝি কবির আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর হতে মুষলধারে শুরু হওয়া বৃষ্টি সারা রাতও চলে। ভারী বৃষ্টির তোড়ে শুক্রবার ভোরে পাহাড় ধসের পালংখালি ক্যাম্প ১৪ ই-২ ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ঘরটি ভেঙে পড়ে। এতে ঘরের সবাই মাটিচাপা পড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। ততক্ষণে আব্দুর রহিম তার দুই শিশুর সন্তানসহ মারা যায়।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম হোসেন বলেন, ভারী বৃষ্টিতে ক্যাম্প-১৪ তে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে কোথাও মুভ করাও কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
অপরদিকে, কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুলে একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, দক্ষিণ ডিককুলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আখি মনি এবং তার দুই শিশুকন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম।
ডিককুলে পাহাড় ধ্বসে নিহতের স্বজনদের বরাতে ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, শুক্রবার ভোররাতের দিকে ভারী বৃষ্টির তোড়ে মিজানের বাড়ির দিক থেকে একটি পাহাড় ধসের বিকট শব্দ শুনতে পায় তারা। পরে তারা গিয়ে দেখেন স্ব-পরিবারে মাটিচাপা পড়েছে মিজানের পরিবার।
তাৎক্ষণিকভাবে মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পরে ভোরের দিকে কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তারা জানান, মিজানের বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে উপর থেকে পাহাড় ধসে তার বাড়িতে পড়ে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধ্বসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকেরা বিধ্বস্ত ঘর উদ্ধার তৎপরতা চালায়।
এদিকে, বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে। টানা অতি বর্ষণে বৃহস্পতিবার জেলা শহরসহ বেশ কিছু গ্রামে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে অনেকের বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকায় জনজীবনে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবীদ মো. আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৩৭৮ মিলিমিটার। আর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা হতে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪৫৩ মিলিমিটার। চলমান মৌসুমে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে তিন নং সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। আরো কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সাথে পাহাড় ধ্বসের সম্ভাবনাও রয়েছে।