৮ জুলাই ২০২৫

কক্সবাজারে হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টারে তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু; পরিবারের দাবি হত্যাকাণ্ড

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »

কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের ‘সী কক্স’ আবাসিক হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টারে খালেদ আশরাফ বাপ্পি (২২) নামে এক তরুণে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রবিবার (৭ আগস্ট) ভোর রাত ১টার দিকে কলাতলীর সৈকত সী-কক্স হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টারে অপমৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে।

বাপ্পি কক্সবাজার সদরের পিএম খালীর নয়াপাড়া বাংলাবাজার কাজীর রোড এলাকার বাসিন্দা। সে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই হোটেলে তিনি পার্ট টাইম চাকরি করতেন।

সী কক্স হোটেলের রিজার্ভেশন অফিসার অর্ণব বলেন, হোটেল থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের সাথে লাগোয়া হোটেলের স্টাফদের কোয়ার্টার রয়েছে। ওখানে স্টাফরা রাত্রিযাপন করেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হোটেলের ডিউটি শেষ করে বাপ্পি স্টাফ কোয়ার্টারে চলে যান। পরে তাকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ রুমে এক সাথে চার জন থাকলেও ওই সময় কেউ রুমে ছিল না। আর রুমটি ভেতর থেকে ‘লক’ করা ছিল।

তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাপ্পিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত বাপ্পির মা রোকেয়া বেগম বলেন, অনেকেই আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি বলবো আমার ছেলে আত্মহত্যা করার মতো কোন ছেলে নয়।

তিনি বলেন, আমার ছেলের সাথে মুফিজ নামের সাতকানিয়ার এক যুবকের সাথে পরিচয় ছিল। পরিচয় সূত্রে যৌথ ব্যবসা করার লক্ষ্যে আমার ছেলে ধার দেনা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুফিজের কথা মতো তার হাতে তুলে দেয়। কিন্তু মুফিজ করোনা ও দোকান ভেঙ্গে ফেলার অজুহাতে ব্যবসা হয়নি, এটা-সেটা বলে আমার ছেলেকে টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা শুরু করে। অথচ ধার ও ঋণের সুদ কেবল বাড়ছিল। এসব নিয়ে মফিজের সাথে মনোমালিন্য চলছিলো। তাই আমার ধারণা, ঠান্ডা মাথায় আমার ছেলে বাপ্পিকে হত্যা করা হয়েছে।

খালেদ আশরাফ বাপ্পির ছোট ভাই রিহাত জানান, রবিবার ভোর রাত সাড়ে ১২টার দিকে এলাকার চাচা সম্পর্কীয় নুরুল আজিমের ফোনে একটি কল আসে। ফোন করে জানানো হয়, বাপ্পি মারা গেছে আপনারা তাড়াতাড়ি আসেন। তখন চাচা নুরুল আজিম আমাকে সাথে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে জানতে পারি ভাইয়াকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ছোট ভাই রিহাতেরও দাবি, তার বড় ভাইয়ের সাথে ব্যবসায়িক পার্টনার মুফিজ এই হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

লাশের সুরতহাল রিপোর্টকারি কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিদ্দিকুর রহমান জানান, মরদেহটি হাসপাতালে ছিল। হোটেল সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জানতে পারি হোটেল সী কক্সের স্টাফ কক্ষে বাপ্পিকে ঝুলন্ত দেখতে পেয়ে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে আমরা ঘটনাস্থলে এসে রুম তল্লাশি করে আলামত হিসেবে ফাঁসের একটি গামছা ও মোবাইল জব্দ করি। গলায় ফাঁসের দাগ আছে। পায়ে আঙুলের ছাপ দেখতে পেয়েছি।

এলাকার এক সূত্র জানায়, বাপ্পি খুবই ধর্য্যশীল ছেলে। পরিবার গোছাতে পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করছিল। সাথে সুযোগ পেয়ে পর্যটনে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু পার্টনার হয়তো বেঈমানি করায় ধার-কর্জ শোধ নিয়ে বেকায়দায় পড়ে ডিপ্রেশনে পড়ে। টাকা না দিতে তাকে কৌশলে হত্যা বা আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে থাকতে পারে। না হলে এত রাতে রুমমেট রুমে না থাকাটাও সন্দেহজনক।

খবর পেয়ে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর একটি টিম হোটেল সী কক্স ও হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টার পরিদর্শন করেছেন।

সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, মরদেহটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে জানতে পেরেছি। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এরপরও সাথে থাকা সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ