জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের ৪টি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ও দুটি পৌরসভার নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। এতে মেয়র পদে ২ জন, চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের ৬ জন এবং স্বতন্ত্র ৬ জন বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলার টৈট্যং, কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ও কৈয়ারবিল, মহেশখালির কুতুবজুম ও মাতারবাড়ি এবং টেকনাফের হ্নীলাতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কুতুবদিয়ার লেমশীখালি, উত্তর ধুরুং ও দক্ষিণ ধুরুং, মহেশখালির মাতারবাড়ি, টেকনাফের সদর, সাবরাং ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
তাছাড়া ব্যালেট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ১টি কেন্দ্রের এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপি দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার সেখানে ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসাইন ওই ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল মতে, পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৮ হাজার ২৭২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেড এম মোসলেম উদ্দিন চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৭৫ ভোট। কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সিকদার (নৌকা) ৪ হাজার ৪৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ফিরোজ খাঁন চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৪ হাজার ২২০ ভোট। কৈয়ারবিল ইউনিয়নে মোহাম্মদ আজমগীর মাতবর (নৌকা) ১ হাজার ৮৩৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী জালাল আহমদ (মটরসাইকেল) পেয়েছেন ১ হাজার ৭৭৪ ভোট। লেমশীখালী ইউনিয়নে মো. আকতার হোছাইন (চশমা) ৪ হাজার ৩৪১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী রেজাউল করিম (নৌকা) ৪ হাজার ৪২ ভোট। দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নে আলাউদ্দিন আল আজাদ (চশমা) ৩ হাজার ৯৬৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৮ ভোট। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে আব্দুল হালিম সিকদার (আনারস) ৬ হাজার ৫১ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী সিরাজ উদ্দৌলাহ (মটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৭২ ভোট। বড়ঘোপ ইউনিয়নে ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।
টেকনাফের ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টির ফলাফল ঘোষণা করেছে জেলা নির্বাচন কমিশন। এতে সাবরাং ইউনিয়নে নুর হোসেন ( আনারস) নিয়ে ১৪ হাজার ৭৪৬ ভোট পেয়ে পূনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোনা আলী নৌকা প্রতীকে ৯ হাজার ৮৭১ ভোট পেয়েছেন। টেকনাফ সদর ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জিহাদ মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে ৯ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া ৭ হাজার ৯৫২ ভোটে পেয়েছেন।
হ্নীলা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রাশেদ মাহমুদ আলী ১০ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলী হোছাইন শোভন পেয়েছেন ৭ হাজার ২৭৩ ভোট।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নে উনচিপ্রাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লম্বাবিল এমদাদিয়া মাদ্রাসাভোট কেন্দ্র নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এই ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে, মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট শেখ কামাল ৭ হাজর ৮৯১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৭ ভোট।
হোয়ানক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর কাসেম পাতা প্রতীক ৬ হাজার ৩৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী অপর বিদ্রোহী প্রার্থী ওয়াজেদ আলী মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৯ ভোট।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এসএম আবু হায়দার নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হক রুহুল টেলিফোন প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৮৯ ভোট।
এছাড়াও চকরিয়া পৌরসভায় মেয়র হয়েছেন নৌকা প্রতীকের আলমগীর চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াবুল হক নারিকেল গাছ প্রতীকের ৯ হাজার ৭৬২ ভোট।
আর মহেশখালী পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের মকসুদ মিয়া ৭ হাজার ৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী সরোয়ার আজম নারিকেল গাছ প্রতীকে ৫ হাজার ৪৫৮ ভোট পান।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালি, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে উৎসবের আবহ নিয়ে শুরু হয় ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন। কিন্তু আমেজের ঘন্টা দুয়েক ভোট গ্রহণ চলার পর শুরু হয় সহিংসতা। এতে গোলাগুলিতে মহেশখালিতে ও কুতুবদিয়া দু’জন নিহত হন। এদের মধ্যে বেলা সোয়া ১০টার দিকে মহেশখালির কুতুবজুম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আবুল কালাম (৩২) নামের একজন নিহত হন। আর বেলা সাড়ে ১২টায় ব্যালেট পেপার ছিনতাই রদ করতে গিয়ে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদুলি হালিম (৩৫) নিহত হন।
বাংলাধারা/এফএস/এআই