ksrm-ads

১৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

করোনাকালীন কেমন কাটছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের দিনকাল?

বাংলাধারা প্রতিবেদন  »

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকল শিল্পচর্চা। এরমধ্যে শিল্পীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে তাদের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবীণ শিল্পীরা এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও তরুণরা মোটামুটি তাদের সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এতে পূর্ণ তৃপ্তি পাচ্ছে না নবীন-প্রবীণ দুই শ্রেণীর সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তবে করোনাকালীন সময়ে অনলাইনের এ চর্চা অন্তত সাংস্কৃতিক শিল্পীদের মনের খোরাক যোগাতে পারছে, এমনই মনে করছেন চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক কর্মীগণ।

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই অনলাইনের মাধ্যমে কোন না কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাতে কিন্তু মনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। যেকোন সাংস্কৃতিক চর্চাই নির্ভর করে দর্শকের উপর। দর্শক আর মঞ্চ একই সুতায় গাঁথা। তবে এমন অপ্রাপ্তির মাঝে কিছুটা প্রাপ্তি হচ্ছে দেশের মাটিতে বসে অনলাইনের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা। এখানে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ঘর বন্দি অবস্থায় অনলাইনভিত্তিক কিছু অনুষ্ঠানে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করলেও সেখানে নেই কোনো আয়। তাই আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। করোনাকালীন কেমন কাটছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের দিনকাল। এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের কয়েকজন স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সাথে।

একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যশিল্পী ও তির্যক নাট্যদলের দলপ্রধান আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি অনলাইনে নাটক করে তৃপ্তি পাই না। অনলাইনে নাটকের ফিলিংসটা পাওয়া যায় না। নাটকের চরিত্র কখনোই দূর থেকে ফুটিয়ে তোলা যায় না। অনলাইনে নাটক করা যায় না। নাটক মানেই একজন জীবন্ত মানুষের সাথে অন্য জীবন্ত মানুষের ক্রিয়া। নাটক অনেকটা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। তবে অনলাইনে রিহার্সেল করার কারণে অনুশীলনটা হচ্ছে। যেটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমাদের মঞ্চে ফিরতে সহযোগিতা করবে বলে আমি মনে করি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার

সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রামের সভাপতি ও আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী বলেন, করোনকালে শিল্পকলা ও থিয়েটারকে খুব মিস করছি। মিস করি কবিতার সেই মঞ্চ ও দর্শকদের। এসব হচ্ছে আমাদের আত্মার সাথে জড়িত।’ এসব অনলাইন-টনলাইনে আমরা অভ্যস্ত নই। মঞ্চটাই হচ্ছে আমাদের প্রিয় অঙ্গন। মঞ্চের সাথে জড়িত আছে আমাদের আবেগ-অনুভূতি। মঞ্চে যখন আবৃত্তি করি সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অনলাইনে সীমিত আকারে আবৃত্তি অনুষ্ঠান তো মনের খোরাক মিটছে না। মানুষ কিছু না কিছুর ওপর আসক্ত। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আসক্ত। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করতে না পারলে অসুস্থবোধ করি। ভালো নেই আমরা। অঞ্চল চৌধুরী বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আয়ের উপর নির্ভরশীল। এর আয় দিয়ে চলে সংসার। আমরা করোনাকালে আর্থিকভাবে কষ্টে আছে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কিছু অনুদান পেয়েছি। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য।

অঞ্চল চৌধুরী

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের সঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়সী রায় বলেন, আমরা শিল্পীরা একেবারেই ঘর বন্দি জীবনযাপন করছি। প্রতিটি সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চই শিল্পীর অলংকার আর দর্শক শিল্পীর ভূষণ। দুইয়ের উপস্থিতিতে একজন শিল্পী তার উপস্থাপনায় পরিপূর্ণতা আনতে পারে। কিন্তু অনলাইনের ক্ষেত্রে এর কিছুই নেই। এখানে শুধু তাই নয়, নেই বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। তাই অনলাইন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে কোনো শিল্পীই আনন্দিত হতে পরে না। আমিও ভালোবোধ করছি না। তবে প্রতিটি জিনিসেরই একটা ভালো দিক আছে। তেমনি অনলাইনেও একটা ভালো দিক আছে। সেটা হচ্ছে এখানে কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই শুধু কণ্ঠের দ্বারা গান করা হয়। এ গান দেশের মাটিতে বসে করছি কিন্তু বিদেশ থেকেও মানুষ শুনে।

শ্রেয়সী রায়

বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের সহকারী সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অতিথি শিক্ষক ও ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টারের পরিচালক প্রমা অবন্তী বলেন, বর্তমানে নৃত্যশিল্পীদের খুবই করুণ অবস্থা। আয় একেবারেই বন্ধ। পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হয়ে গেছে। নৃত্যশিল্পীদের আবার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা বাঁচলেইতো দেশের সাংস্কৃতি বাঁচবে। তাই সাংস্কৃতিকর্মীদের পাশে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দাঁড়ানো উচিৎ। তাহলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

প্রমা অবন্তী

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন