ksrm-ads

২১ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা, চলবে দেড়মাস

সায়ীদ আলমগীর  »

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশংকা মাথায় নিয়ে কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে দেড়মাস ব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। জেলা প্রশাসনের অনুমতি অনুসারে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পর্দা উঠছে ২০২০-২০২১ সালের বাণিজ্য মেলার। প্রথম ধাপে মেলা চলবে ২৪ জানুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত। দেড় মাস ব্যাপী মেলার অনুমতি পেয়েছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার। তার পক্ষে মেলার আয়োজন করছেন অন্যরা।

তবে, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের নামে মেলার অনুমোদন হলেও প্রচার পাচ্ছে এবারও যৌথভাবে একটি সাংবাদিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার চেম্বার মেলার আয়োজনের পেছনে রয়েছে। নুরুল আবছারের নামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মেলার অনুমতি পেয়েছে ১০ ডিসেম্বর হতে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এদের পিরিয়ড শেষ হলে সাংবাদিক সংগঠন ও চেম্বার অব কমার্সের সময়কাল শুরু হবে।

যদিও আয়োজকদের মতে, করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি কথা মাথায় রেখে এবার মেলা উদ্বোধনে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। আর মেলায় মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রবেশ গেইটে বসানো হবে ২টি জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন। মেলা ঘিরে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। ৩২টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে সবকিছু।

তবে, করোনা আতংক নিয়ে মেলার আয়োজন সবাইকে শংকিত করছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে চলমান সময়ে প্রতিদিন করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় এ আতংক বলে দাবি করছে সচেতনমহল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংকে ধীরে ধীরে কমছে পর্যটক উপস্থিতির সংখ্যা। এর মাঝে বিনোদনের এ মেলা বিষাদ ডেকে আনছে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং চিকিৎসক সমাজও।

কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের আশংকার কথা জানিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের বস্ত্র শিল্প প্রদর্শনী মেলার অনুমোদন দেয়নি জেলা প্রশাসন। মেয়েদের এ মেলায় কয়েকশ ক্রেতার ভীড় হতো। কিন্তু বাণিজ্য মেলায় দিনে-রাতে কম করে হলেও ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ অংশ নেন। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়ার পরও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মেলার অনুমোদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক নেতা বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বময় বাড়তে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে মৃত্যুর হারও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংক বিরাজ করছে বাংলাদেশেও। করোনা প্রতিরোধে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানা লোকজনকে আনা হচ্ছে সাজা ও জরিমানার আওতায়। এমনই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে আয়োজন হচ্ছে মাস ব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার। এতে করে কক্সবাজারে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়া নিয়ে চরম আতংক বিরাজ করছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, শীতকাল শুরুর আগেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক হতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও সে মতে কাজ করছি। মেলার বিষয়টি জানার পর আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়েকে অবগত করে মেলা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। এরপরও যদি মেলা চলমান থাকে, আর যদি করোনা রোগী বৃদ্ধি পায় তার সব দায়ভার জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে। আমি অনেক চিকিৎসকেও আতংকিত হয়ে কথা বলতে দেখেছি।

একদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার উপলক্ষ্য গণজমায়েত সৃষ্টির সুুুুযোগ তৈরি করে আবার কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণের মাঝে দশ লাখ পিস মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কালে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল। স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে জরিমানা করা হচ্ছে। এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেলও দেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সার্জিকাল মাস্ক অপচনশীল। এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সার্জিকাল মাস্ক পরিহার করে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিতরণ করা কাপড়ের মাস্ক পরিবেশবান্ধব। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলায় প্রসারিত হবে এই কার্যক্রম।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মেলার অনুমতি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, জেলা পুজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জেষ্ঠ্য সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

সরেজমিন দেখা গেছে , মেলার আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেলার প্রবেশপথে গড়া হয়েছে রাজকীয় নান্দনিক বিশাল গেইট। এবারো মেলায় থাকছে বিভিন্ন পণ্যের ১০৪টি স্টল। থাকছে দেশীয় প্রসিদ্ধ বিভিন্ন কোম্পানীর ১৬টি প্যাভিলিয়ন। তারমধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল, শিশুদের বিনোদনমূলক রাইডস, খাবারের দোকান নজর কাড়া ভাবে সাজানো হয়েছে। মহিলাদের কসমেটিকস ও কাপড়ের বাহারী সামগ্রি নিয়ে স্টল রয়েছে অনেক। বড়দের বিনোদনে রয়েছে জাদু প্রদর্শনী, মাগ্যাজিন অনুষ্ঠান বিচিত্রাসহ নানা আয়োজন। এসব নিয়ে চলছে জোর প্রচারণা।

বোদ্ধামহলের দাবি, অতীতের মতো বিনোদনের আশায় প্রচুর লোক সমাগম হবে মেলায়। সৈকতের খোলামেলা এলাকার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দি লোকজনের মাঝে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। মেলা এমনই একটি আয়োজন। বাচ্চাদের মেলায় আনা হবে চরম বিপদ। কিন্তু প্রচারণায় শিশু কিশোররা বেশি বায়না ধরবে মেলায় আসতে।

আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, করোনা মোকাবেলায় সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও শীতকালীন সময়ে প্রকোপ বাড়া নিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় মেলার আয়োজন সব সফলতাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই কক্সবাজারকে করোনামুক্ত করতে মেলা বন্ধ রাখা প্রয়োজন মনে করছি।

তবে, এ বিষয়ে মেলার অনুমতিদাতা জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন সৈকতে হাজার হাজার লোকসমাগম হচ্ছে। সেই হিসেবে আমাদের করোনা সংক্রমণ কম। তাছাড়া লকডাউন না থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের শর্তে মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার পরও যদি করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ে তখন মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন