চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড় শাহ আমানত সেতুর (নতুন ব্রিজ) নিচে প্রকাশ্যে ‘নদী’ ভরাট করে রাতারাতি ‘প্রাইভেট জেটি’ নির্মাণ করে চুটিয়ে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে বন্দর কতৃপক্ষ ও স্থানীয়দের অভিযোগের তীর মেসার্স নাহার ট্রেডিং ও মেসার্স বার আউলিয়া কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি।
কিন্তু নদীগর্ভে বালি ভরাট করে অবৈধ ভাবে জমি দখলে নিলেও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যাণ্ড)
রহস্যজনকভাবে নীরব। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এ দখল-দারিত্ব।
সম্প্রতি, হাইকোর্ট নদীর তীরের দেড়শ’ ফুট এলাকাকে নদীর সীমানা ঘোষণা করলেও সেটার তোয়াক্কা করছে না অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও দখলদার।
বরং রাতারাতি নদীর জমি দখল করে বালু, ইট কংকর ফেলে ভরাটে মেতেছে ওই সিণ্ডিকেট।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি বারবার জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর জমিতে অবৈধ ভাবে প্রাইভেট জেটি নির্মাণ করে মালামাল লোড-আনলোড করলেও উপজেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে।
সেক্ষেত্রে কর্ণফুলী ইউএনও ও এসিল্যাণ্ড বলছেন বিষয়টি বন্দরের অধিক্ষেত্র। আর বন্দর কতৃপক্ষ বলছেন এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু কিছুতেই নানান কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর দাবি ও জনরোষে স্থানীয় প্রশাসন, বন্দর কতৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কিন্তু এরপরেও দখলদারেরা ৪০ থেকে ৫০ ফুট নদী ভরাট করে ফেলেছে। এছাড়াও ব্লকের পাড়ের সাথে স্লোপ মাটি দিয়ে ভরাট করে প্রাইভেট জেটি নির্মাণ করে ফেলেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, কর্ণফুলী উপজেলার নতুন ব্রিজের নিচের অনেকটা অংশ ভরাট করে জেটি নির্মাণ করছে প্রভাবশালী একটি মহল। এতে নদীর গতিপথ ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীকে সংকীর্ণ করে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন নদী দখলদারেরা।
জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এস্টেট শাখা চিঠি দিয়ে দখলদারদের জানান, কর্ণফুলী নদীর বামতীরে শাহ আমানত সেতুর পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে ১৮’শ বর্গফুট ভরাট করা জায়গা ৩ দিনের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে অনুমোদনহীন বার্জ সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি দখলদারেরা।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, “মেসার্স নাহার ট্রেডিং” কর্তৃক শিকলবাহা মৌজাস্থ কর্ণফুলী নদীর বামতীরে কর্ণফুলী ব্রীজের পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে নদী তীরবর্তী ১৮০০ বর্গফুট জায়গা ভরাটসহ চট্টগ্রাম বন্দরের অনুমতি ব্যতিত ৬০-০” × ২৫-০” পরিমাপের ১টি বার্জ স্থাপন করা হয়েছে। যা-প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।
চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ আইন ২০২২ এর তৃতীয় অধ্যায়ের (১৯) এ বন্দর কতৃপক্ষের ক্ষমতা ও দায়িত্বে বলা আছে, কতৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বন্দর সীমানার সর্বোচ্চ জোয়ার রেখা হতে ৫০ গজের মধ্যে কোনো রূপ স্থাপনা নির্মাণ, অপসারণ, মাটি খনন বা ভরাট করতে পারবে না।
মেসার্স নাহার ট্রেডিং এর প্রোপাইটর মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘আমরা এখনো বন্দরের অনুমতি পাইনি। তবে বন্দরের অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। কিছু কাগজপত্র অপূরণ ছিলো তা চেয়েছে। এসব কাগজপত্র ব্যবস্থা করে জমা দিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। উল্লেখ্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। এছাড়াও এটি বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকা।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত ফোন রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এর ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর জায়গায় অবৈধভাবে ১৮’শ বর্গফুট জায়গা ভরাট করা হয়েছে। আমরা ৩ দিনের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা শিগগরই বন্দরের সার্ভেয়ার পাঠিয়ে পরিমাপ করে। আইনি ব্যবস্থা নেবো শিগগিরই।’
বাংলাধারা/চট্ট/নিপ্র