চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইআইআইএন) নেই এমন ১৭ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করা বই ও শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ‘কর্ণফুলী প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন’ নামক একটি সংগঠন।
গত রোববার ও মঙ্গলবার স্কুল এসোসিয়েশনের পক্ষে সভাপতি মুহাম্মদ শফিক সাদেকী ও সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর আলম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা সেটা জানা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা বেসরকার স্কুল বিষয়ে উল্টো নানা অভিযোগের কথা শোনালেন।
স্কুল এসোসিয়েশনটির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বৃহত্তর পটিয়া উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১লা জানুয়ারীতে সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসব পালন করে আসছেন। কিন্তু কর্ণফুলী নতুন উপজেলা হওয়ার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে উপজেলার ইআইআইএন বিহীন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বই নিয়ে বই উৎসব করতে পারছেন না এবং পারেনি।
সরকার কর্তৃক ঘোষিত নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়নে ইআইআইএন ধারী প্রতিষ্ঠানের সমান্তরালে ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সরকারের নানামূখী শিক্ষা সম্প্রসারণমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা করা হয়। কিন্তু কর্ণফুলী উপজেলায় ইআইআইএন বিহীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ও প্রধান শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তালিকা নিয়েও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেননি।
এমনকি স্কুল এসোসিয়েশনটি দাবি করেছেন, উপজেলার ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সরবরাহকৃত বই পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও মাধ্যমিক অফিস তা বিতরণ করেনি। ফলে উপজেলার সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।
এতে উপজেলার জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীরা অন্যান্য উপজেলার তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
অভিযোগ পত্রে সংগঠনটি বিদ্যালয় সমূহের তালিকা, শিক্ষার্থী অনুপাতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে নতুন ও পুরাতন বই প্রাপ্তির বিবরণী, বিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর তথ্য, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ সরবরাহের কপি, ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের কপি, বিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য সরবরাহকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা সংযুক্ত করেছেন।
এতে সংগঠনটি ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য বইগুলো প্রাপ্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন এর সভাপতি মুহাম্মদ শফিক সাদেকীকে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় মন্তব্য জানা যায়নি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর আলম বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদান করেছেন ২০১৯ সালে। আমরা ২০২০ সাল পর্যন্ত বই পেয়েছি। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে আর বই পাচ্ছি না। ২০২৩ সালে যখন আমরা বই আনতে গেলাম। তখন এ জে চৌধুরী স্কুলের গোডাউন থেকে আমাদেরকে ২০২২ সালের পুরাতন বই দিয়েছেন।’
সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের কে এখন বই না দিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার পুরাতন বই বিক্রি করে সরকারি ফান্ডে টাকা জমা দিয়েছেন। এরপর সে উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এমনকি আমাদের মাধ্যমিক স্কুলগুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ না দিয়ে প্রাইমারি লেবেলের ইবতেদায়ী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন।’
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘বই পাবে ইআইআইএনভূক্ত বেতনধারী স্কুল গুলো। আমরা সরকার থেকে বই চাই সে সব স্কুলের জন্য। সরকারি স্কুলকে বই বিতরণ করার পর যদি অতিরিক্ত থাকে। তবে সেখান থেকে বেসরকারি স্কুলগুলোতে ১০-২০ সেট করে বই দিই। লেখার খাতিরে লিখে অভিযোগ করলে সামনে আরো কঠোর হবো।’
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাথ আরও বলেন, ‘বই তো দুরের কথা। ওরা তো পড়ানোর যোগ্যতাও রাখেন না। কারণ একটি প্রতিষ্ঠান খুলতে হলে, সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। সরকার অনুমতি দিলে আপনি গাছ-বাঁশ দিয়ে বিল্ডিং করবেন। এ বিষয়ে এডিসি শিক্ষার নেতৃত্বে একটা কমিটিও আছে। সব মিলিয়ে আমার বক্তব্য হলো এটাই। ওদের নামে আমি কোন বই চাইও না, আসেও না।’
প্রসঙ্গক্রমে জানা যায়, গত বছরের ১৩ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর ইআইআইএন না থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছিলেন। সে সময় কর্ণফুলী উপজেলার সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মাউশিতে পাঠানো হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ওই অফিস আদেশে বলা হয়, নতুন কারিকুলাম বিস্তরণ সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ইআইআইএন না থাকা স্কুল, কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজের তথ্য জরুরি ভিত্তিতে ইমেইলে পাঠানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।