ksrm-ads

১৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

মানুষের ফুসফুস ভরছে বিষে

কর্ণফুলীতে মরণঘাতী জাহাজের জং, স্লো পয়জনের স্বীকার লাখো মানুষ

নেপথ্যে সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্সসহ কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড, বিএফডিসি ডকইয়ার্ড, মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়ে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে স্যান্ড ব্লাস্টিং করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ডকইয়ার্ডে রাতভর চলা এই কার্যক্রমের ফলে আশপাশের বাড়িঘর ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়েছে, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যত নীরব।

প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলা এই স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের কারণে বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট ও শিশুদের নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

বিশেষ করে সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্স, কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড, বিএফডিসি ডকইয়ার্ড, মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়ে এবং এস আলম অয়েল ট্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকাগুলোতে দূষণের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে।

শ্বাস নিতে কষ্ট, জীবন দুর্বিষহ:

ইছানগরের বাসিন্দা মোঃ সালাম, জুয়েল ও সরোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বড় বড় কোম্পানিগুলো শুধু নিজেদের মুনাফার চিন্তা করছে, মানুষের জীবনমানের কথা ভাবছে না। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ডকইয়ার্ড করার কোনো অনুমোদন নেই, অথচ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাহাজের গায়ে লেগে থাকা জং তুলতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্প্রেসর দিয়ে সিলেটি সিপ্টিন বালু নিক্ষেপ করা হয়, যা বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে আশপাশের এলাকায় কুয়াশার মতো ধুলার আস্তরণ তৈরি করে। ফলে প্রতিদিন সকালবেলায় গাছের পাতা পর্যন্ত ধুলোয় সাদা হয়ে থাকে।

গ্রামের রোকন ও ফরিদ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই স্যান্ড ব্লাস্টিং শুরু হয়, তখন শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শব্দ ও বায়ুদূষণে ঘরবাড়িতে থাকা কষ্টকর। মাস্ক পরেও সুরক্ষা নেই, বিষাক্ত বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যাচ্ছে শরীরে।

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও পরিবেশ দপ্তরের উদাসীনতা

স্থানীয়রা বারবার অভিযোগ করলেও ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা। ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সুমন জানান, “প্রতিদিন স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। সী রিসোর্স গ্রুপকে বলেছি স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের সময় চারপাশ ঢেকে কাজ করতে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ফয়সল বলেন, স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে চারপাশ ঢেকে রাখার নিয়ম রয়েছে, যাতে ধুলা বাতাসে ছড়াতে না পারে। যদি নিয়ম না মানা হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

তবে, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান জানান, আমরা দূষণের বিষয়ে তদন্ত করব, অভিযোগ সত্য হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, বাস্তবায়ন অনিশ্চিত

সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্সের পরিচালক এনাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. ইসমাইল স্বীকার করেছেন যে ধুলো সমস্যার কারণে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি, ভেজা বালি দিয়ে স্যান্ড ব্লাস্টিং করব। এর জন্য মেশিন আমদানি করা হচ্ছে।

সচেতনতা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণই সমাধান

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এভাবে স্যান্ড ব্লাস্টিং চলতে দেওয়া ভয়ংকর পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করছে। নির্ধারিত নিয়ম মেনে চললে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, তবে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ডকইয়ার্ড মালিকেরা দায়মুক্ত থেকে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের দাবি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের জীবন আরও বিপর্যস্ত হবে। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন