জে.জাহেদ, কর্ণফুলী »
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্পে সড়ক প্রশস্তকরণ ও সেতু নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় জনগণ লিখিত অভিযোগ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক হতে পুরাতন ব্রীজঘাট চলমান সড়ক নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে সৈন্যেরটেক খালের উপরে বাস্তবায়নাধীন কালভার্ট তথা ব্রীজের কাজ শুরু করেছেন। কাজের শুরুর দিক থেকে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার যেমন নদীর বালি, কংকর দিয়ে সড়ক ও ব্রীজের কাজ করায় স্থানীয় লোকজনের নজরে আসে।
এমনকি অভিযোগ উঠেছে, এসব কাজে তাঁরা কাঁদামাটি, ময়লা যুক্ত পাথর দিয়ে র্নিমাণ কাজ করছে। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি মৌখিক ভাবে ঠিকাদারের লোকজনদের জানানোর পরও কাজ বলবৎ থাকায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় বিক্ষোব্ধ জনতা। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনসাধারণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার চাইলেও ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট লোকজন তা দেখাতে ব্যর্থ হন।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ দাবি করেন, কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধ করতে জনগণ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে এ অভিযোগ করেছেন।
এদিকে কাজের মান ও প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট অফিসার পেয়ার হোসেন বুলবুল জানান, সড়কের কাজে বালির ব্যবহার একটু এদিক সেদিক হতে পারে কিন্তু ব্রীজে টেস্ট করা সিলেটী বালি ব্যবহার করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সড়ক ও ব্রীজ নির্মাণে নানা অনিয়ম হচ্ছে মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যা সরেজমিনে পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কতৃক বাস্তবায়ন করা প্রকল্প হলো মইজ্জ্যারটেক আখতারুজ্জামান চত্বর হতে পুরাতন ব্রীজঘাট-বিএফডিসি সড়ক র্নিমানের কাজ চলছে। সড়কের এসব কাজে ব্যাপক ব্যতিক্রম ও যেনতেন ভাবে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়া, মাটির পরিবর্তে নদীর বালি দিয়ে কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় জনগণ।
প্রকল্প প্রস্তাবনা ও দোহাজারী সড়ক ও জনপদ উপ-বিভাগের দেওয়া তথ্য সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে সড়ক উন্নয়নে কর্ণফুলীতে পুরোদমে দুটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে বৃহৎ একটি প্রকল্পে উপজেলার মইজ্জ্যারটেক (বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) চত্বর থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট ফেরিঘাট সড়ক-বিএফডিসি সড়ক-আরবান আলী সড়ক পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে প্রশস্ত করা হচ্ছে এবং এ সড়কে থাকা দুটি পাকিস্থান আমলের পুরাতন সেতু ভেঙে নতুন ভাবে দুটি পাকা সেতু নির্মাণ করার প্রস্তুুতি কাজ চলছে।
তথ্যমতে, সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৩২ মিটার ও ৩৬ মিটার, প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার । মইজ্জ্যারটেক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের প্রশস্ত হবে বর্তমানে থাকা ১৮ ফুট হতে ২৪ ফুটে উন্নতিকরণ। বাকি দুই কিলোমিটার সড়ক হবে ১২ফুট হতে ১৮ ফুটে বর্ধিত করা। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এ সড়কের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা প্রায়। যে প্রকল্পের কাজের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পেরও কাজ করছেন তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান-রানা বির্ল্ডাস প্রাইভেট লিঃ, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ ও সালেহ আহমেদ জে.বি।
এদিকে কর্ণফুলী উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এসব কাজ দেখে স্থানীয় লোকজন মনে করেছেন প্রকল্পের কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অবহেলা করা হচ্ছে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর