জে. জাহেদ, কর্ণফুলী »
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের ছেলে মো. মিজানুর রহমান। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এলাকায় তিনি ‘গোল্ডেন বয়’ হিসেবে পরিচিত। স্কুল ও কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছেন।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কিন্তু সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে মিজান এবারের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় তিনি একাধারে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৮৮নং ক্রমিকে স্থান করে নেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এ ইলেকট্রনিক্যাল ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মেধা তালিকায় স্থান এবং একই সাথে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ১১৩তম স্থান অর্জন করে সুযোগ পায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির।
তবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজানের স্বপ্ন ছিলো এক সময় ডাক্তারি পড়ার। পরে পরিবারের ইচ্ছায় চট্টগ্রামের বাহিরে যেতে হবে এ ভাবনায় সিদ্ধান্ত পাল্টালেন। চুয়েটেই পড়াশোনা করতে চান। আল্লাহ তার আশা পূরন করেছেন। তিনি সেরা প্রকৗশলী হয়ে দেশের সেবা করতে চান।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো ভর্তির জন্য এককালীন এতো টাকার ব্যবস্থা করা তার দরিদ্র পিতার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। পরে শিকলবাহা এস.এ কাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে বিষয়টির খবর পেয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ তার পাশে দাঁড়ান।
গত বুধবার দুুপুরে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার অফিসে প্রধান শিক্ষিকার উপস্থিতিতে স্ব-উদ্যোগে নিজ বেতন থেকে তাৎক্ষনিক মেধাবী মিজানকে ডেকে এনে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরে তাকে মিষ্টি মুখ করান। এই টাকা পেয়ে ছাত্রটি আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ইউএনও তাকে ভবিষ্যতে আরো সহায়তা ও সব সময় পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। আমি মনেকরি যে তার প্রকৌশলী হওয়ার পিছনে শুধুমাত্র সে নয়, একটা পরিবার স্বচ্ছল হবে এবং তার পাশাপাশি দেশ একজন মেধাবী প্রকৌশলী পাবে যিনি দেশের সেবায় কাজ করবে।’
জানা গেছে, মিজানুর রহমান কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের ৮নং ওর্য়াডের শাহা মিয়া হাজী বাড়ির মো. এয়াকুবের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন সামান্য পান ব্যবসায়ি। ২০১৭ সালে মিজান এ.জে চৌধুরী বহুমূখী (কৃষি) উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এ উত্তীর্ণ হন।
মিজানের বাবা মো. এয়াকুব বলেন, ‘কর্ণফুলীর ইউএনও’র মানবিকতায় আমার ছেলে আজ চুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমরা স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ
প্রসঙ্গত, এর পুর্বেও ২০১৯ সালের ১লা এপ্রিল কর্ণফুলী ইউএনও সরকারী কর্মকর্তার খোলসে আবদ্ধ না থেকে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী অন্ধ মহিলা দেলোয়ারা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বিধাব ওই মহিলার অবস্থা ছিলো খুবই নাজুক। ইউএনও তার ব্যক্তিগত বেতন থেকে ঘর সংস্কার করার জন্য ৩ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
সে সময়ও স্থানীয়দের কাছ থেকে বিদ্যুৎবিহীন ভাঙ্গা ঘরে প্রতিবন্ধী এক অন্ধ মহিলা বসবাস করেন এমন সংবাদ পেয়ে নীরবে মানুষের পাশে দাড়ানো এই উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ইউএনও’র উপজেলাধীন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ পুরা উপজেলার ৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ খরচে কেক বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এমনকি গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে ব্যক্তিগত খরচে তিনি কর্ণফুলী উপজেলার প্রায় ৪’শত এতিম শিশুদের নিয়ে এক বেলা ভালো খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
ইউএনও তাবরীজ আরো বলেন, আমি সরাসরি প্রান্তিক মানুষের সাথে তাদের সমস্যা, সুঃখ-দুঃখ নিয়ে কথা বলি, শোনার চেষ্টা করি। তাই খুব সহজেই সবাই আমার দফতরে চলে আসেন অনেক আশা নিয়ে। আমিও আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি পাশে দাঁড়াবার।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম