বৈশাখের কাঠফাটা রোদে দেশজুড়ে দাবদাহ চলছে। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না পর্যটন নগরী কক্সবাজারও। স্মরণকালের প্রচণ্ড গরম আর তাপপ্রবাহে এখানকার মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকুলেও হাঁসফাঁস অবস্থা চলছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাণীকুলের পাশাপাশি সাফারি পার্কে থাকা প্রাণিগুলোও একটু শীতল পরশের জন্য ছটফট করছে।
এ থেকে পরিত্রাণে জলচর প্রাণীগুলোর আবাসে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা এবং স্থলচর প্রাণীকুলকে সকাল-সন্ধ্যা দু’বার গোসলের ব্যবস্থা করাচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষ, এমনটি দাবি পার্কের ইনচার্জ (রেঞ্জার) মো. মাজহারুল ইসলাম।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারের ইনচার্জ সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, টানা পক্ষকাল ধরে কক্সবাজারের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। এরমাঝে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল দুদিন কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। যা অনুভূত হয়েছিল ৪০-৪৫ ডিগ্রির মতো। প্রায় প্রতিদিন ৩৪-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা বহমান থাকছে। ব্যারোমিটারে তাপমাত্রা ৩৫ দেখালেও জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে সেটা অনুভূত হচ্ছে ৪০-৪২ ডিগ্রি। এমন পরিস্থিতে গরমে বাইরে বের হওয়া চরম দূরূহ হয়ে পড়ছে। হিটস্ট্রোক থেকে নিজেকে রক্ষায় সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত পারত পক্ষে বের না হওয়ার পরামর্শই দেয়া হচ্ছে।
চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ইনচার্জ (রেঞ্জার) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের যেমন অস্বস্তি হচ্ছে, তেমনি অস্বস্তিতে হয় প্রাণীদেরও। এ অবস্থায় জলচর প্রাণীরা প্রাকৃতিক ভাবে গোসল করতে পানির পরিমাণ নিয়মিত বাড়ানো হচ্ছে। আর স্থলচর প্রাণীগুলোকে নিয়মিত দু’বার গোসল করানো হয়।
তিনি আরো জানান, পার্কে কুমির, কাছিম, অজগরসহ ৬৩টি সরীসৃপ প্রজাতি, বাঘ, সিংহ, বানর, গয়াল, জলহস্তি, উইল্ডিবিস্ট, হাতি, হরিণ, হনুমানসহ ১১৮টি স্তন্যপায়ী, ইমু, উটপাখি, গ্রীফন শকুন, রাজহাস, টিয়া, বনমোরগ, রাজ ধনেশসহ ২১৭টি পাখিসহ প্রাণী রয়েছে ৩৯৮টি। ৯০০ হেক্টর জমি নিয়ে বেষ্টিত পার্কের মাঝে বায়ুডাইভারসেটি এলাকা রয়েছে প্রায় ২০০ হেক্টর। এ অংশটি গাছে আচ্ছাদিত। বাকী অংশগুলোও মাদার ট্রিসহ নানা পাহাড়ি গাছগাছালিতে পূর্ণ। ফলে এখানে গরম অনুভূত কম। তারপরও খাঁচা বন্দি প্রাণীকূলকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষ সদা সচেষ্ট।
সাফারি পার্কের প্রবেশ টিকেট ইজারাদার ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, বৈশাখের খরতাপ প্রবাহিত হলেও প্রতিদিনই পার্কে দর্শনার্থী আসছেন। গড়ে হাজার দেড়েক প্রকৃতি প্রেমী পার্কে ঢুকেন। বাইরের প্রকৃতিতে অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হলেও পার্ক এলাকায় ছায়া ও বাতাস থাকায় দুপুর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পার্কে অবস্থান করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। পার্ক থেকে ফিরে শীতলতার গল্প করায় বাড়ি বা পাড়ার অন্যরাও গরমে পার্কে আসছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়েও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষের পাশাপাশি জীবজগতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত শীত মৌসুম হতে জেলায় বৃষ্টিপাত নেই বললে চলে। অতীতে বৈশাখের শুরুতে কালবৈশাখীসহ টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হতো। কিন্তু চলমান সময়ে টানা সময় ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে, তাপপ্রবাহ ক্রমে বাড়ছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন অন্যদিকে নির্বিচারে গাছ নিধন- এসব ঘটনা প্রকৃতিকে উত্তপ্ত করছে। আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব হতে মুক্তির একমাত্র উপায় বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার কিনারসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।
সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান আরো বলেন, আগামী ২ ও ৩ মে সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড় হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কক্সবাজারেও হবে আশা করা হয়। তখন হয়তো কিছুটা তাপপ্রবাহ কমতে পারে।