জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের উখিয়ায় ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পরও নারীসহ একই পরিবারের তিনজকে মাদকের মিথ্যা মামলায় আসামি করার অভিযোগ উঠেছে উখিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। পালংখালীর রহমতেরবিল এলাকার এক মামলায় তাদের আসামি করা হয়। আসামি হওয়াদের একজন আগে থেকেই কারান্তরিণ রয়েছেন। অন্য আসামিদের একজন স্কুল শিক্ষার্থী ও অপরজন গৃহিণী। বিষয়টি প্রকাশ পাবার পর এলাকায় নানা সমালোচনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আসামিরা হলেন, পালংখালীর রহমতেরবিল এলাকার বাসিন্দা কারান্তরিণ কামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী তৈয়বা বেগম (২৫) এবং কামাল উদ্দিনের ভাই স্কুলছাত্র জয়নাল উদ্দিন।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, উখিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কাজী তোবারক হোসেন পুরো পরিবারকে মাদক মামলার আসামি করার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেড় লাখ টাকা তাকে দেওয়ার পর একটি মাদেকর মামলায় তাদেরকে আসামি করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিনের স্ত্রী বলেন, এহেছানুল করিম (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে ১ লাখ ইয়াবাসহ র্যাব-১৫ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় মামলার পর তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয় (নং-১৩১/৫৪৬)।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার উপ পরিদর্শক কাজী তোবারক হোসেন এ মামলায় আমাদের পরিবারের সবাইকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করনে। বারবার বাড়িতে এসে হয়রানি করতেন। এ ঘটনার চার মাস আগেই আমার স্বামী একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছেন।
তৈয়বা বেগম আরও বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবগত করা হলে তিনিও পুলিশ অফিসারকে ডেকে আমাদেরকে হয়রানি না করার অনুরোধ জানান। এরপর তিনি আমাদের পুরো পরিবারকে মাদক মামলায় জেলে পাঠানোর হুমকি ও ভয় দেখানো অব্যাহত রাখলে বাধ্য হয়ে আমার ব্যবহৃত গয়না ও বাড়িতে থাকা গরু বিক্রি করে কাজী তোবারক হোসেনের জন্য নিকট আত্মীয় আমির হামজার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পাঠাই।
কিন্তু তিনি টাকা নেওয়ার পরও কারাগারে থাকা আমার স্বামী কামাল উদ্দিন, আমি এবং আমার দেবর স্কুল শিক্ষার্থী জয়নালকে মাদক মামলায় আসামি করেন।
টাকা পৌঁছে দেওয়া আমির হামজা বলেন, কারাগারে থাকা জয়নাল মেম্বার পরিবারকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা না করার শর্তে আমি নিজে উখিয়া থানায় গিয়ে তোবারককে থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। এরপরও ওই পরিবারের তিন সদস্যকে মিথ্যে মামলায় যুক্ত করেছেন এসআই তোবারক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল উখিয়ার পালংখালীস্থ উখিয়ার ঘাট এলাকা থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে পালংখালীর উত্তর রহমতেরবিল এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে এহেছানুল করিম (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে এক লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে।
মূল এ মামলায় ওই তিনজকে আসামি করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন উপ-পরিদর্শক তোবারক হোসেন।
বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) তোবারক হোসেন বলেন, ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া এহেছানুল করিম আমার আবেদনে আসামি হওয়া তিনজন তার সাথে জড়িত বলে জবানবন্দি দেওয়ায় তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। তিনি দেড় লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
যদিও কারাগার থেকে মুঠোফোনে এহেছানুল করিম বলেন, আদালতে কোনো জবানবন্দি দেওয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, এসআই তোবারক হোসেন আমাকে কারাগারে থাকা কামাল, তার স্ত্রী ও তার ভাই জয়নাল ইয়াবা চালানের সঙ্গে জড়িত বলে তাদের নাম বলার জন্য শিখিয়ে দেন। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় মারধরও করেছেন। এরপরও আমি তাদের নাম বলিনি। এখন শুনছি আমার বরাত দিয়ে ওই তিনজকে আসামি করা হয়েছে। যেটা আমি জানি না। এ বিষয়ে প্রয়োজনে আদালতে উঠে জবানবন্দি দিবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত এসআই তোবারক হোসেন।
বিষয়টি সম্পর্কে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জমান বলেন, কারাগারে থাকা ব্যক্তিকে আসামি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এসপি আরও বলেন, আরেকটি অভিযোগের কারণে উখিয়া থানার এসআই তোবারক হোসেনকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।