বাংলাধারা প্রতিবেদন »
মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধ পড়ে আছে আগ্রাবাদ এলাকার ফুটপাতে। ঠিকমতো কথা বলতে পারেনা। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। বাম হাতের উপরের অংশের হাঁড় দুই ভাগ হয়ে বের হয়ে আছে, সামান্য মাংসের মধ্যে হাতটি ঝুলছে। পচা মাংসে মাছি ভনভন করছে।
সোমবার (২০ মে) তরুণ সাংবাদিক আজহার মাহমুদ ও লায়ন মাহবুবুর রহমান শাওন মুমূর্ষু অবস্থায় ফুটপাতে পড়ে খাকা বৃদ্ধটিকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। বায়জিত, হাসান মাহমুদ, সালমান ও সাহেদা আকতারসহ আরো কিছু তরুণের সেবায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিকিৎসায় বৃদ্ধটি এখন সুস্থতার পথে। হাসাপাতলের বিছানায় তিনি উঠে বসেছেন এবং নিজ হাতে ভাত ও খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন লায়ন শাওন।
সাংবাদিক আজহার মাহমুদ জানান, লোকটি সম্পর্কে হাসানের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি হাসানকে বললাম লোকটিকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই লোক নড়েনা। সে বলে, ডাক্তারকে ওখানে নিতে। ইফতার পর্যন্ত দুই ঘন্টা চেষ্টা করেও তাকে হাসপাতাল নেয়া গেলো না। আবার হাতের এমন দশা যে, জোরাজুরিও সম্ভব ছিলো না। হাসানের সাথে বায়োজিদ নামের আরেক তরুণ নিজ হাতে ভাত খাইয়ে লোকটিকে পাহারায় রাখা হয়।
আজহার আরও জানায়, অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাত নয়টার দিকে লোকটাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মূলত শাওনের সহযোগীতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা ও মেডিসিন পুরোটাই ফ্রি করে দিলেন। লোকাটিকে ইসিজি করা হলো, স্যালাইন দেয়া হলো, জরুরী বিভাগ থেকে অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে নিয়ে পরে ড্রেসিং করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা জানালেন, অন্তত দুই সপ্তাহ আগে তার হাতের এই অবস্থা হয়েছে। তার প্রেসার একেবারেই কম। যে কোনো মূহুর্তে মারা যেতে পারতো। রক্তের প্রয়োজন ছিল। পরে হাসপাতালের শিশু আইসিইউ’র সহকারী রেজিষ্টার ডা. মিশু তালুকদার রক্ত দিলেন। চিকিৎসকরা আরও বলেন, লোকটির হাত/হাঁড় জোড়া লাগবে কিনা সন্দেহ আছে। তবে তাঁরা হাড় জোড়া দেয়া কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। সেক্ষেত্রে বেশকিছু অর্থের প্রয়োজন হবে।
শাওন জানায়, আমাদের সাধ্যের অধিক প্রয়োজন হলে সবার সহযোগীতা লাগবে। তাই সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
লোকটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আজহার মাহমুদ বাংলাধারাকে বলেন, লোকটির বাম হাতের হাঁড়টা ভেঙ্গে মাংসের সাথে ঝুলছিল। এখন সার্জারি করা হবে। আপাতত ওষধ খাইয়ে, রক্ত দিয়ে সার্জারি করানোর জন্য তাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। লোকটির বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। সে নিজের হাতে খেতে পারে, বসতে পারে। সমস্যা হচ্ছে লোকটি অগোছালো কথা বলে। লোকটি তার নাম বলছে নুরুল আলম, বাড়ি ভোলায়। তার পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম