ksrm-ads

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩১ ‘ভিআইপি বন্দী’ কেমন আছেন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা এবং বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩১ জন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে (ভিআইপি) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি কারাগারে থাকা ১০৮ জন ভিআইপি বন্দীকে বিশেষ ডিভিশন প্রদান করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০৮ জনকে ডিভিশন দেয়া হয়। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ২৯ জন; সাবেক সংসদ সদস্য ২২ জন; সরকারি কর্মকর্তা ৪৪ জন এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। ভিআইপি হিসেবে কারাগারে আটক ২৩ জন এখনো ডিভিশন পাননি।

জেলকোডের ৬১৭ বিধিতে বলা আছে, ‘যারা ভালো চরিত্রের অধিকারী ও অনভ্যাসগত অপরাধী; সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের, যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি–সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন বা অন্য কাউকে এসব অপরাধে প্ররোচিত বা উত্তেজিত করেননি, তারা ডিভিশন-১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। কারাবিধির ৬১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব-নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা ও অভ্যাসের কারণে জীবনমান উন্নত মানের, এমন বন্দীরা ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।’

ডিভিশন পাওয়া বন্দী হিসেবে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, টিপু মুনশি, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম সুজন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আসাদুজ্জামান নূর, কামরুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ইমরান আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ও রমেশ চন্দ্র সেন।

এছাড়া আছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, ফরহাদ হোসেন, শহিদুজ্জামান সরকার, মাহবুব আলী, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাকির হোসেন ও কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম ওরফে জ্যাকব ও আরিফ খান জয়।

কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডিভিশন পাওয়া তালিকায় আছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক, সাবেক মন্ত্রী আবদুস শহীদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, শাহজাহান ওমর, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আবদুস সালাম মুর্শেদী, সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। ডিভিশন পাওয়া তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন- বিচারপতি এ এইচ এম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম সোহায়েল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, হেলালুদ্দিন আহমেদ, মহিবুল হক, আমিনুল ইসলাম খান ও শাহ কামাল।

এই তালিকায় আরো আছেন- সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহ, অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মশিউর রহমান, সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, বেসিক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আলী চৌধুরী।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডিভিশনে আরো আছেন ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আবদুল্লাহেল কাফি, র‍্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি মো. আবুল হাসান ও গুলশান থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম।

দেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা সাবেক ২২ সংসদ সদস্য আদালতে আবেদন করলেও ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ডিভিশন পাননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- কাজী জাফর উল্ল্যাহ, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, তানভীর ইমাম, সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, গোলাম কিবরিয়া, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, কামরুল আশরাফ খান, আবদুর রউফ, রাগেবুল আহসান, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), আহমদ হোসেন, শাহে আলম, সাদেক খান, সেলিম আলতাফ জর্জ, মাসুদা সিদ্দীকি রোজী, মাহবুব আরা গিনি, আবদুর রহমান বদি, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আলী আজম মুকুল, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, জান্নাত আরা হেনরি, রশিদুজ্জামান মোড়ল।

সাবেক কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. ফরমান আলী বলেন, আদালত বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন সাপেক্ষে ডিভিশন-১ ও ডিভিশন-২ দেয়া হয়। ডিভিশন পাওয়া বন্দী একা বা একাধিক বন্দীর সঙ্গে থাকতে একটি কক্ষ বরাদ্দ পান। সেখানে খাটে জাজিম ও তোশকের ওপর চাদর বিছানো থাকে। একটি চেয়ার ও একটি টেবিল থাকে। বন্দী বা বন্দীদের জন্য আলাদা শৌচাগার থাকে। বন্দীকে প্রতিদিন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক দেয়া হয়। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে টেলিভিশন থাকে। আলাদা রান্নার ব্যবস্থা থাকে। নির্ধারিত বরাদ্দের টাকায় বন্দী নিজের পছন্দের খাবার তালিকা রান্নার জন্য বলতে পারেন। ডিভিশন পাওয়া বন্দীর তত্ত্বাবধানে একজনকে (কয়েদি) দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৫ দিন বা এক মাসে স্বজনদের সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতে পারেন।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ জানিয়েছেন, ডিভিশন পাওয়া বন্দীরা কারাবিধি অনুযায়ী নির্ধারিত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তবে ২৩ জন ভিআইপি বন্দী ডিভিশনের জন্য আবেদন করলেও আদালত এখনো তা অনুমোদন দেননি। এ কারণে তাদের সাধারণ বন্দী হিসেবেই কারাগারে থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ