ইয়াসির রাফা »
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১ সেমিস্টার ফি মওকুফ ও সকল ধরনের ক্লাস ও কার্যক্রম বয়কটের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার (৩ মে) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সারাদেশের কমপক্ষে ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রানালয়, ইউজিসি চেয়ারম্যান ও নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বরাবর ইমেইলের মাধ্যমে এসব দাবির বিষয়ে জানিয়েছেন।
ইউজিসি বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতেই তাদের এমন পদক্ষেপ। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায়ে নমনীয়তা দেখাবে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করতে হলে শিক্ষার্থীদের বকেয়া পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাই যেভাবেই হোক তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করতেই হচ্ছে। তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

রাকিব আহমেদ নামে এক ছাত্র জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাই অনিশ্চিত; সেখানে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস, টিউশন ফি আদায় ও পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অমানবিক। তাছাড়া ছুটি দেবার পর থেকেই আমি গ্রামে চলে আসি। এখান থেকে নেটওয়ার্ক পাওয়া কষ্টকর। যার ফলে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছি না ।
নাসরিন ফাতেমা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি টিউশান করে নিজের ফি চালিয়ে থাকি। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমার টিউশান বন্ধ। পরিবারের আয়ও বন্ধ প্রায়। তাছাড়া অনলাইন ক্লাসের জন্য মোবাইল ডাটা নিতে পারছি না। কারণ রিচার্জের জন্য বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, বাসায় নেট কানেকশানও নেই। কি করব আসলে বুঝতে পারছি না। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বিপাকে পড়তে হবে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত বাতিল চান তিনি।
প্রণব শীল নামে আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেন, দেশে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে মানুষের আয় শূন্যের কোঠায়, জমানো টাকা বাড়ি ভাড়া আর খাওয়াদাওয়া পিছনে আগের মতোই যাচ্ছে, এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাস শুরু হলে সেমিষ্টার ফি দিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠবে, আর অনলাইন ক্লাস হলে আমরা ভার্সিটির ক্লাস রুমের মতো পড়ার পরিবেশ পাবো না, লাইব্রেরী সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো এই অবস্থা কোনোভাবে সেমিস্টার ফি চাওয়া কাম্য নয়, আর এই মহামারীর মধ্যে কারোর পড়াশুনায় মন দেয়ার মানসিকতা নাই আর বিশাল সেমিস্টার ফি ও চাপ সৃষ্টি করবে এখানে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে অনলাইন ক্লাস বর্জনের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে ইউজিসি বলছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল নতুন সেমিস্টার শুরু না করা এবং টিউশন ফি আদায় না করা। তবে করোনার এই পরিস্থিতি আরো দীর্ঘ্য সময় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন সেমিস্টার শুরু না করা গেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটের মুখে পড়বে। আর তাতে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী কাজিম উদ্দিন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা করোনার ভয়াবহতা থেকে মুক্ত নয়। আর এটিও মনে রাখতে হবে তুলনামূলক ভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফি একটু বেশি। বর্তমান বাস্তবতায় অনেক মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্তদের ঘরে এখন ঠিক মত চুলোয় আগুন জ্বলছেনা। তাই এবার সেমিস্টার ফি মওকুফ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি আদায়ে নমনীয় না হলে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হারাবে। তিনি বলেছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ী মানসিকতা নিয়ে চলছে। চলমান পরিস্থিতিতে এই মনোভাব পরিবর্তন না হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের ছাত্র হারাবে।
উল্লেখ্য, দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেইসবুক পেইজে ”বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারবে- ইউজিসির এই নির্দেশনার সাথে আপনি
কি একমত?” শিরোনামে একটি জরিপ তৈরি করা হয় যেখানে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। যার মাঝে ১৫ শতাংশ মানুষ হ্যা এবং ৮৫ শতাংশ না মনে করেন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ