ksrm-ads

২০ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

খুনি প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর চান টেকনাফবাসী

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টায় কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। বাহারছরা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে সড়কে লুটিয়ে পড়লেও বেঁচে ছিল সিনহা। কিন্তু ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে ফিল্মী স্টাইলে পা দিয়ে মাথা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন বলে স্বাক্ষ্যতে উঠে এসেছে।

এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে ছয় আসামিকে। সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স এখন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছেছে রায় ঘোষণার এক সপ্তাহ পর। মামলার নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপর পেপারবুক প্রস্তুত করার জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হবে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকার নাকি সালের ক্রমানুযায়ী শুনানি হবে-সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তা ডেথ রেফারেন্স শাখাকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। তখন ডেথ রেফারেন্স শাখা সেভাবেই মামলার পেপারবুক প্রস্তুতে পদক্ষেপ নেবে।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনহা হত্যা মামলায় বাদি পক্ষের কৌশলী অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মধ্যে মামলার বিচারের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দুই আসামি ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন দণ্ড দেয় ছয় আসামিকে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেছেন। পাশাপাশি ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়েছে ডেথ রেফারেন্স শাখায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অধস্তন আদালতের মামলার রায়, তদন্ত প্রতিবেদন, এজাহারসহ সব নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠানো হয়ে থাকে।

সূত্র মতে, সিনহা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌছার পর তা যাচাই-বাছাই করছে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা। মামলার সব নথি ক্রমানুসারে সাজিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে পেপারবুকের জন্য। আর এই পেপারবুক প্রস্তুত করা হবে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।

পেপারবুক প্রস্তুত হলেই ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি হয়ে থাকে সালের ক্রমানুযায়ী। উচ্চ আদালতে মামলা জটের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি। বর্তমানে হাইকোর্টে ২০১৭ সালে অধস্তন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে। সেই হিসাবে সালের ক্রমানুযায়ী এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিচার প্রার্থীদের।

তবে এর আগেও শুনানি করা সম্ভব যদি রাষ্ট্র বা সুপ্রিম কোর্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বা বিজি প্রেস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে থাকে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই অধস্তন আদালতের রায় ঘোষণার দুই বছরের মধ্যেই ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি সম্ভব বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

অপর দিকে, সিনহা হত্যা মামলায় পাওয়া মৃত্যুদন্ড দ্রুত কার্যকর চান ওসি প্রদীপ সময়ে টেকনাফে কারণে-অকারণে হত্যার শিকার ২০৪ ব্যক্তির পরিবার। তাদের দাবি ওসি প্রদীপের বদ চিন্তা ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শতাধিক শিশু এতিম হয়েছে। বিধবা হয়েছেন দু’শতাধিক নারী। কয়েকশ নারী সম্ভ্রমও হারিয়েছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের ধরে এনে দিনের পর দিন থানা কম্পাউন্ডে আটকে রেখে ঘরের সুন্দরী বউ, মেয়ে বা বোনকে থানায় আসতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ওসি প্রদীপ ও তার অনুগতরা ওই নারীকে ভোগ করে বাড়ি পাঠিয়েছে। এমনও আছে চাহিদা মতো টাকা, সম্ভ্রম সবকিছু দেয়ার পরও বাড়ির পুরুষ সদস্যকে বুলেট থেকে বাঁচিয়ে ফেরানো যায়নি। এমন সব পরিবারের সদস্যরা প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হতে প্রতিনিয়ত প্রার্থণা করছেন।

টেকনাফ থানার দায়িত্বে থাকাকালীন ওসি প্রদীপের চাঁদাবাজি, নারী ধর্ষণ, ক্রসফায়ার বাণিজ্য ও মাদক কারবারের খবরা-খবর জেনে গিয়েছিলেন মেজর সিনহা। কৌশলে এসব ভিডিও চিত্রও ধারণ করেন তিনি।

এ খবর জানতে পেরে ওসি প্রদীপ মেজর সিনহাকে কক্সবাজার ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। সেনাবাহিনীর সাহসী এই মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান তার ইউটিউব চ্যানেল ‘জাস্ট গো’ ডকুমেন্টারি নির্মাণে কক্সবাজারে অবস্থান করে নিজ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে মেজর সিনহাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেন ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও তার সহযোগীরা।

প্রথমে ৩১ জুলাই রাতে বাহারছড়া মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার সময় ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনিতে মেজর সিনহাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল প্রদীপ-লিয়াকতের। এতে স্থানীয় লোকজন মেজর পরিচয় পেয়ে তাকে সম্মানজনকভাবে বিদায় দেয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে বাহারছড়া এপিবিএন চেকপোস্টে ওসি প্রদীপ তার অধীন লিয়াকতকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে সিনহাকে। এ কারণে সাক্ষ্য প্রমাণ হওয়ায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে ফাঁসি এবং তাদের সহযোগিতা করায় অপর ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ করেছেন মামলাটির বিচারকাজ। স্বল্প সময়ে চার্জগঠন, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এই রায় দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পর এ মামলা সবচেয়ে আলোচিত মন্তব্য করে সচেতন মহল বলেন, এ মামলায় আদালতের দেয়া রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়।

আরও পড়ুন