আসন্ন কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর ১০টি হাটে বসেছে গরুর বাজার। কুরবানির আর মাত্র চারদিন বাকী থাকলেও নগরীর হাটগুলোতে এখনো জমে উঠেনি বেচা-বিক্রি। তবে ক্রেতা সমাগম কম হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নগরীর হাটগুলোতে প্রতিদিনই আসছে ট্রাকভর্তি গরু।
সরেজমিনে সাগরিকা গরুর বাজারে দেখা যায় খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে ছোট-বড় হাজার হাজার গরু। তবে ক্রেতাশূন্য এ বাজারে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দূর দূরান্ত থেকে ট্রাক ভর্তি করে গরু নিয়ে আসা বেপারীদের কপালে।
রংপুর থেকে ১০ টি ট্রাকযোগে ৫০টি গরু নিয়ে এসেছেন নুরুন্নবী। পঞ্চাশটি গরু থেকে মাত্র ৩টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন এ বেপারী। তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতা খুবই কম। যা কয়েকজন আসছেন, তারা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেওয়া দামের সাথে তাদের প্রস্তাবিত দামের বিশাল ব্যবধান। প্রতিটি গরুতে আগের বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। খাদ্য, মেডিসিন সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবকিছু হিসেব করে আমরা স্বল্প লাভে দাম দিচ্ছি।
আরেক গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, আমি কুষ্টিয়া থেকে গরু এনেছি। গরুর ক্যারিং খরচও উঠবেনা এবছর। গরুগুলো হাট পর্যন্ত আনতে লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি না হলে ফেরত নিতে আরও লাখখানেক টাকা লোকসান হবে। তবে শেষের দিকে বাজারের চিত্র বদলাবে বলে আমরা আশাবাদী। শেষের চার দিনে যদি বেচা-বিক্রি বাড়ে তাহলে লাভের মুখ দেখব।
সাগরিকা পশুর বাজারের ইজারাদার এরশাদ মামুন বলেন, এখনো পর্যন্ত হাটে বিক্রি কম, তবে শেষের দিনগুলোতে আশানুরূপ বিক্রি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সাগরিকা গরুর বাজারের মতো নগরীর বাকী হাটগুলোর চিত্রও ভিন্ন নয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইজারা দেওয়া বাকী নয়টি হাটেও এখনো জমে উঠেনি গরুর বাজার।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানান, চট্টগ্রামে এবার ঈদুল আজহায় আট লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানি দেওয়া হবে। সে হিসেবে প্রথমদিকে ক্রেতা না থাকলেও শেষের দিকে হাট জমে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন হাটের ইজারাদাররা।
তবে কুরবানির জন্য গরু কিনতে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, বিক্রেতারা উচ্চমূল্যে দাম হাঁকছে।
কুরবানির জন্য গরু কিনতে আসা ক্রেতা আজাদ বলেন, গরুর বাজারে এসে দেখছি বাজেটের সাথে গরুর মিল হচ্ছেনা। গরুর দাম চড়া। বিক্রেতারাও দাম হাঁকছেন আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
হাটে লোকসমাগম কম হওয়ার কারণ অনলাইন প্লাটফর্মে গরু বিক্রি ও সশরীরে খামারে গিয়ে গরু ক্রয় বলে দাবি করছেন তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে মানুষ গরু পছন্দ করছে। গরু পছন্দ হলে সশরীরে খামারে গিয়ে দেখে আসার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক খামারী গরু বিক্রির পর ঈদের দিন পর্যন্ত গরু নিজের কাছে রেখে দেখভাল করে কুরবানির দিন সকালে কিংবা আগেরদিন রাতে গরু ক্রেতার বাড়িতে পৌছে দিচ্ছে। এসব সুবিধা পাওয়ায় মানুষ খামার থেকে দেখেশুনে ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গরু কেনার প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে।