ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

গল্প: নীল রঙের বার্তাবাহক

এখন আমার সবকিছুতেই কেন জানি হাসি পায়। কারণে আর অকারণে খানিকটা বলা যেতে পারে, এই ধরুন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি কিংবা ধোঁয়া উঠা চায়ের মত। কি অদ্ভুত না বিষয়টা? কবে থেকে যে, আবার এই রোগের উদ্ভব হল। সেই অংক কষতে গিয়ে হয়তো সকাল থেকে রাত হয়ে যাবে।

শীতকাল আমার তেমন একটা ভাল লাগে না। যদিও আমি পৃথিবী আলোকিত করে এসেছি শীতকালেই। কেন জানি তবুও খুব একটা জমে উঠে না শীতের সাথে আমার। এটাও এক প্রকার বড্ড ভাবনার বিষয়! খুব আজব মনে হচ্ছে আমাকে?

আজ ১১ তারিখ। আজ অদিতির চিঠি আসার কথা। এতোক্ষণে এসেছে বোধদয়। প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১১ তারিখ ও আমাকে নীল রঙের খামে করে চিঠি দেয়। কারণ নীল ওর খুব প্রিয় রঙ। কি অদ্ভুত না বিষয়টা? ছেলেদের প্রিয় রঙ নীল হয় কিন্তু মেয়েদের ও যে প্রিয় রঙ নীল হয় তা অদিতি কে না দেখলে বোঝা যেত না।

আমি প্রতি বছর এই চিঠির অপেক্ষায় থাকি খানিকটা বলা যেত পারে অপেক্ষামান পথিকের মত। চিঠিটা পড়ার আগে আমি অদিতির দেয়া শেষ উপহার, ওভারকোট পড়ে নেই। অদিতি চিঠিতে প্রথমেই লিখেছে, আমাকে কি তোর খুব মনে পড়ে? প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার সময় আমরা মামার দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেলপুরি খেতাম। আর তুই ইচ্ছা করে অনেক ঝাল খেয়ে বলতি আমি আর কাল থেকে খাব না। আর শেষ পরীক্ষার সময় কেন জানি সবসময় বৃষ্টি হতো। সেদিন আর কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। কে শুনে কার কথা বাপু অনায়াসে বৃষ্টিতে ভিজতাম। পুরাই কাকভেজা হয়ে যেতাম। ভিজে যেত স্কুলের ড্রেসটিও। আর বাসায় এসে মার বকুনি। ব্যতিক্রম কিছু নয় চিঠির ভিতরে প্রত্যকবারের মত এবার ও কিছু শুকিয়ে যাওয়া বকুল ফুল রাখা। আর তা থেকে কি সুন্দর মিষ্টি একটা গন্ধে চারপাশটা ভরে গেল। অদিতির প্রিয় ফুল বকুল আর আমারও। তাই ও প্রতিবার চিঠিতে বকুল ফুল রাখে।

আর কত কিছু লেখা চিঠিটাতে। আর পড়তে পারছি না। চিঠিটা পড়ে প্রতিবারের মতো চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি পড়ছে। হঠাৎ দূর থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসছে মনে হচ্ছে। পেছনে ফিরে তাকাতে তাকাকেই কন্ঠস্বর মৃদু হয়ে গেল। কাছে এসে দারোয়ান চাচা বলছে, আপা এই দশ বছরে এই দিনে অদিতি আপাকে দেখতে আপনি প্রতি বছর বিদেশ থেকে দেশে পাড়ি জমান। অদিতি আপা সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী ছিল।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে দারোয়ান চাচা বলল, সন্ধ্যার পর কবরস্থানে থাকা উচিত না আপামণি। বাড়ি ফিরে যান নিশ্চয় আপনার পরিবারের সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আশপাশ তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে পাখি যেমন নীড়ে ফিরে যায়, আমিও তেমন একা বাড়ি ফিরে গেলাম। সেই প্রিয় রাস্তার ফুটপাত ধরে যেখানে আমার আর অদিতির স্মৃতিরা আজও জীবন্ত।

লেখক: মাবিয়া নওশীন; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন