বাংলাধারা ডেস্ক »
গাজীপুরের বাঘেরবাজার এলাকায় আলম এশিয়া বাস থেকে ফেলে পিষ্ট করে যাত্রী সালাউদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় সেই বাসের কন্ডাক্টর আনোয়ারকে ( ৩০ ) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার ( ১০ জুন ) রাতে শেরপুরের নন্দীবাজার এলাকা থেকে বাস কন্ডাক্টর তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আনোয়ার শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার পোড়াবাড়ি এলাকায় মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।
জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান ভুঁইয়া ও সাদেকুর রহমান জানান, প্রথমে গতকাল বিকেলে ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থানা সীমান্ত এলাকার কংস নদ থেকে অভিযুক্ত বাসচালক রোকন উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে নিয়ে অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। রাতে চালক রোকন উদ্দিনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কৌশলে বাস কন্ডাক্টর আনোয়ারকে তাঁর বাড়ির পার্শ্ববর্তী নন্দীবাজার এলাকায় ডেকে আনা হয়।
রাত ৯টার দিকে আনোয়ার পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বাজারসংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে পৌঁছায়। সে সময় ওত পেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাতেই সেখান থেকে গ্রেপ্তার চালক ও কন্ডাক্টরকে নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত রোববার ঈদের ছুটি শেষে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে করে ময়মনসিংহের শ্বশুরবাড়ি থেকে গাজীপুরের বাসায় ফিরছিলেন স্থানীয় স্কটেক্স অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার গাড়িচালক সালাহ উদ্দিন (৩৫)। পথে বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে বাসের সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর, হেলপার ও চালকের সঙ্গে সালাহ উদ্দিনের বাগবিতণ্ডা হয়।
নিজেকে গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে সালাহ উদ্দিন মোট বাসভাড়া ৬০০ টাকার কিছু কম দিতে চাইলে ওই বাগবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। পরে তিনি ভাড়ার পুরো টাকাই পরিশোধ করেন। কিন্তু বিতণ্ডার জেরে বাসের সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর ও হেলপার সালাহ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করেন এবং বাস থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন।
এদিকে বাসকর্মীদের হাতে মারধরের আশঙ্কায় সালাহ উদ্দিন তাঁর ভাই জামাল উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে সংবাদ দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাজীপুরের বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলেন। খবর পেয়ে জামাল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভাই ও ভাবির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাসটি বাঘেরবাজার এলাকায় পৌঁছলে বাসের শ্রমিকরা লাথি মেরে সালাহ উদ্দিনকে বাস থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফেলে দেন ও বাসের চালক তাঁর স্ত্রীকে না নামিয়ে বাসটি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় সালাহ উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন গতিরোধের চেষ্টায় বাসের সামনে দাঁড়ালে চালক সালাহ উদ্দিনকে চাপা দিয়ে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যান।
এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই সালাহ উদ্দিন নিহত হন। পরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের আমতলা এলাকায় বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীকে ফেলে দেওয়া হয় ওই বাস থেকে। স্থানীয় হোতাপাড়া এলাকার ফুয়াং কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাসটি ফেলে রেখে পালিয়ে যান বাসের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপার। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় বাসটি জব্দ করলেও চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর ও হেলপারের খোঁজ পায়নি।
এদিকে ওই ঘটনায় রাতে নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তাতে বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামি করা হয়। পুলিশ ঘটনার পর থেকেই পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এরই একপর্যায়ে জব্দ হওয়া বাসের ভেতর থেকে একটি মামলার রসিদ উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে চালকের তথ্য ও মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। পরে সেই সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জয়দেবপুর থানা পুলিশ গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে চালক রোকন উদ্দিনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়।
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে রোকন উদ্দিন তাঁর মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে খবর পায় পুলিশ। খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমানের নেতৃত্বে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সে সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোকন উদ্দিন পাশের কংস নদীতে ঝাঁপ দেন। পুলিশও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় কৌশলে রোকন উদ্দিনের মা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন।
বাংলাধারা/এমআর/এসবি