চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কটির কালভার্ট নির্মাণকাজ চলছে প্রায় বছরজুড়ে। সড়কটির নির্মাণকাজ কিছু অংশ শেষ হওয়ার পরই কুরবানী ঈদের আগমুহূর্তে কালভার্টের একপাশ খুলে দেওয়া হয় যানবাহন চলাচলের জন্য।
পরে অপরপাশের কাজ শুরু করলে পুনরায় বন্ধ করা হয় দুইপাশের সংযোগ সড়ক। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের প্রায় ২০ ঘন্টা পুরোদমে সড়কের উভয় অংশ দখল করে বসে ভাসমান দোকান। যেন বিনা ইজারাতে কালভার্টটি বরাদ্দ নিয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়াসহ দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বাসিন্দাদের যাতায়াতের অন্যতম সড়ক চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক। মাইকিং আর পণ্য বিকিকিনির ডাকাডাকিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। কালভার্ট বন্ধ রাখায় চলছে না যানবাহন, এতে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে পৌঁছাতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। এছাড়াও ভাসমান দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে সৃষ্ট ধুলোবালিতে নাকাল হয়ে পড়েছে তারা। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুরবানি ঈদ উপলক্ষে সড়কটি খুলে দেওয়া হলে দীর্ঘদিন যানজটের মধ্যদিয়েও কোনোভাবে চলাচল করে যানবাহন আর পথচারীরা। তবে সপ্তাহ দুয়েক আগে চালু সড়কটি বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড। কালভার্টের অপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতেই সড়কটি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
আবুল কালাম নামের এক পথচারী বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করি আমি। ধুলোবালির কথা না বলি। এখানে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো হুটহাট করে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। তাদের হাঁকডাক আর মাইকিংয়ে কানের অবস্থা করুণ। বৃষ্টি পড়লে কালভার্ট আর সামনে-পেছনের সড়কের একাংশ কাদামাটিতে ভরে উঠে। যেটুকু অংশ বাকী থাকে সেই অংশ বরাদ্দ নিয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবরাহাম বলেন, ‘স্কুলে যাই আসি, তবে কাপড়চোপড় পরিষ্কার থাকে না। রোদ থাকলে ধুলোবালি, আর বৃষ্টি পড়লে কাদামাটি। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। স্কুল ড্রেস দুইটা কেনার ক্ষমতা নেই। ময়লা হোক আর পরিষ্কার একই ড্রেস পড়েই স্কুলে যেতে হয়। না হয় স্কুল থেকে এসে রাতে ধুয়ে সকালে আবার পড়ি। হাটার জায়গা থাকে না, পুরো জায়গা ওরা (ভাসমান ব্যবসায়ী) দখল করে আছে। যেখানে হাঁটার উপযুক্ত সেখানেই তারা দোকান বসিয়েছে।’
দোকানগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দোকানী পণ্যের পসরা সাজিয়েছে সড়ক ও কালভার্টের উপর। এসব দোকান কে বা কার থেকে অনুমতি নিয়ে বসিয়েছে তার কোনো সঠিক উত্তর নেই তাদের। লাইন ধরে বসা এই ব্যবসায়ীরা সড়ক-কালভার্ট সংকুচিত করে দোকান বসালেও কোন তৎপরতা দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল মুহাম্মদ শাহ আলী বলেন, প্রকল্পের কাজ কিছুটা শেষ হলে আমরা ঈদের পরই সড়কটি খুলে দিই। তবে কিছু অংশের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় কিছুদিন আগে সড়কটি বন্ধ করি। এই সুযোগে ভাসমান ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়েছে। আমরা বারবার তাদের সেখান থেকে তুলে দিই কিন্তু আবার সুযোগ বুঝে তারা বসে যায়। মানুষের চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেটি লক্ষ রেখে স্থানীয় প্রশাসনেরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা তুলে দিলে আবার তারা বসে যায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী জানান, কালভার্টের কাজ চলমান থাকায় তারা সুযোগ নিয়েছে। ব্রীজের দুইপাশে দুই ওয়ার্ড ৭ এবং ৮। যতদিন কাজ চলমান থাকবে ততদিন এসব ভাসমান দোকান উঠাতে কষ্ট হবে। সড়কটি খুলে দিলে ভাসমান দোকান উচ্ছেদে সিটি কর্পোরেশন থেকে অভিযান চালানো হবে।
ভাসমান দোকানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের আমরা অনেকবার উচ্ছেদ করেছি কিন্তু তারা আবারও বসে যায়।