কক্সবাজার প্রতিনিধি »
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত চলমান থাকলেও মংলা-পায়রায় ১০ ও চট্টগ্রামে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত চলায় সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি পূর্ণিমা তিথির জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ছে ৭-৮ ফুট। এতে উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারের সর্বত্র গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে। ফলে হোটেলেই বন্দি সময় পার করছেন টানা তিনদিনের জন্য বেড়াতে আসা পর্যটকরা। ঘরবন্দি হয়ে আছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ঘলঘাটা, মাতারবাড়ি এলাকায় জোয়ারের পানি লোকালয় প্লাবিত করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সেন্টমার্টিনে আটকপড়া পর্যটকরা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ। ঘুর্ণিঝড়ের যেকোন দূর্যোগকালীন মূহুর্তে স্থানীয়দের পাশাপাশি আটকা পড়া পর্যটকদেরও নিরাপদ রাখতে সাইক্লোন শেল্টার এবং বহুতল ভবনগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পর্যটকদের আহার ও আবাসন নির্বিঘœ করা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া না কাটা পর্যন্ত তাদের দেখভাল করা হবে বলে উল্লেখ করেন ইউপি চেয়ারম্যান। দ্বীপেও বৃষ্টির পাশাপাশি হালকা বাতাস রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান জানান, বেলা ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘণিভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ রয়েছে ১৩০ কিলোমিটার। যেটি ধমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে। ভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব, অন্যদিকে ‘পুল মুন’ টাইড চলছে ফলে সমুদ্রের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, বুলবুলের তীব্রতা শুরু হলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ভূমিধ্বস ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছে সংশ্লিষ্টরা। পাহাড় ধ্বসের শংকার রয়েছে জেলা শহরসহ পাহাড়ি অন্যান্য এলাকাতেও। তাই বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বহুতল ভবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও। উপকূল হিসেবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খরুশকুল, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে জেলার উপকূল এবং আশপাশ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেয়া রয়েছে। ০১৭১৫-৫৬০৬৮৮ নাম্বার সচল রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রোম চালু করা হয়েছে। দূর্যোগ সংক্রান্ত সকল তথ্য এখানে সরবরাহ ও পাওয়া যাবে।
ঢাকা থেকে পরিবার-পরিজন মিলিয়ে ২৫ জনের দল নিয়ে তিনদিনের জন্য বেড়াতে আসা সাজ্জাদুল হক বলেন, বেড়াতে এসে এখন হোটেল রুমে বন্দি হয়ে আছি। কক্সবাজারে সংকেত কম হলেও বৈরী আবহাওয়া এবং বৃষ্টির কারণে টীমের নারী ও শিশু-কিশোররা বের হতে ভয় পাচ্ছেন। তাই কোথাও ঘুরা হচ্ছে না।
পর্যটকদের মাঝে তরুণ-যুবারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বালিয়াড়িতে ঘুরলেও সিংহভাগ পর্যটক হোটেল কক্ষেই সময় কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট অর্কিডের মহা-ব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার ও মোহাম্মদীয়া গেষ্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, দুর্যোগের সময় যাতে আইন-শৃংখলার কোন অবনতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রেখে মাঠে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। দৃষ্টি রাখা হচ্ছে পর্যটন এলাকাতেও।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম