আশরাফুন নুর »
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে অর্ধশত বছর ধরে আয়োজিত ‘জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)’ এখন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর আরবি মাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ এ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপিত হয়। এই দিন পৃথিবীতে মহানবীর (দ.) আগমন উপলক্ষে আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এ জশনে জুলুসের আয়োজন করে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আজ রোববার (৯ অক্টোবর) নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে জশনে জুলস বের করা হবে।
এ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) বর্তমান বিশ্ব ইসলামী সংস্কৃতির আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় সংযোজন। এ জশনে জুলুসের সৌন্দর্য ও প্রভাব বর্তমান এ বর্ণাঢ্য রূপ ধারণ করেছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল এ পৃথিবীতে শুভাগমন করেন। মহানবীর (দ.) এ আগমনকে ঘিরে সেদিন অসংখ্য ফেরেশতা ও জান্নাতি রমণীরা নূরানি মিছিল সহকারে মা আমেনার ঘরে এসেছিলেন। আর ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ে মহানবীর (দ.) নেতৃত্বে লক্ষাধিক সাহাবি নিয়ে মিছিল হয়েছিল। ধর্মীয় শোভাযাত্রার এসব ঐতিহ্যকে ধারণ করেই প্রবর্তিত হলো মহানবীর (দ.) শুভাগমন বা মিলাদকে কেন্দ্র করে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জুলুসটি বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছে সেটি হলো বার আউলিয়ার পূর্ণভূমি চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত চট্টগ্রামের এ জশনে জুলুসে লখ লাখ মুসলমানের সমাগম হয়। চট্টগ্রাম নগরীর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা হতে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল যে জশনে জুলুসটি বের হয়ে আসছে। এ জশনে জুলুসকে কেন্দ্র চট্টগ্রাম নগরীর মোড়ে মোড়ে, ফ্লাইওভারে, অলি-গলি ও সড়কে মাইকিং, লাইটিং, পোস্টার, ব্যানার, পেস্টুন ও নানান সাজসজ্জ্বায় সাজিয়েছে।
আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র)’র নির্দেশ ও রূপরেখা অনুসারে এ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) চট্টগ্রামে শুরু হয় ১৯৭৪ সনে (১৩৯৪ হিজরি) ১২ রবিউল আউয়াল। সেদিন সকালে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ নূর মুহম্মদ আল কাদেরীর নেতৃত্বে কোরবানিগঞ্জসহ বলুয়ার দিঘীপাড় খানকাহ্-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ শেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে ওয়াজ, মিলাদ ও মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল জুলুসটি। ১৯৭৬-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এর নেতৃত্বে ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (র)। ১৯৮৭ সাল হতে অন্তত ৩৪ বার এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরই শাহজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহম্মদ তাহের শাহ্ (ম.জি.আ.)।
বর্তমান এ জশনে জুলুসটিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এবং বিশ্বের অপরাপর জুলুসের মূল প্রেরণা হিসেবে ধরাণা করা হয়। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো পৃথিবীর অন্য কোথাও জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) আয়োজন এর আগে হলেও হতে পারে। হয়তো সেগুলোর খবর বিশ্ববাসীর কাছে সময়মত এসে পৌঁছায়নি কিংবা মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। সে হিসেবে শুরুতেই প্রথমে সমগ্র বাংলাদেশে, এবং পরবর্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রেরণার কারণ হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছে চট্টগ্রামের এই বিশাল জুলুসটি।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল থেকে মুখরিত হয়ে উঠবে বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি খ্যাত সমগ্র চট্টগ্রাম। নবীপ্রেমী লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে জসনে জুলুসের বর্ণাঢ্য র্যালিটি বন্দরনগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করবে। প্রতি বছরের মতো শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণ করবে। এ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নী (দ.) উদযাপনে চলছে নগরীর মহল্লায় মহল্লায় নানা প্রস্তুতি ও সাজ-সজ্জ্বা।