সারাদেশে কমবেশি শুটকি উৎপাদন হলেও দেশজুড়ে আলাদা কদর রয়েছে চট্টগ্রামে উৎপাদিত শুটকির। স্বাদে-গন্ধে অনন্য এ শুটকি মিশে আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম শুটকিপল্লি, নদীর উত্তর-দক্ষিণ তীরঘেঁষা বাকলিয়া, ইছানগর, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট ও জুলধায় উৎপাদিত এসব শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশেও।
চট্টগ্রামের উৎপাদিত শুটকির মুখরোচক স্বাদ যেন প্রকৃতির অকৃপণ ঐশ্বর্য। ভোজনরসিক বাঙালী চট্টগ্রামের শুটকির মুখরোচক স্বাদের সাথে সহজেই তফাৎ খুঁজে নিতে পারেন অন্য শুটকির। এ শুটকির সুখ্যাতি রয়েছে দেশি-বিদেশি অতিথিদের ভোজনবিলাসেও।
চট্টগ্রামে শুটকির সবচেয়ে বড় বাজার আছদগঞ্জ। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার শুটকির হাট বসে এ বাজারে। হাটের দিন ছাড়াও সাপ্তাহের অন্যান্য দিনও কমবেশি বিকিকিনি হয় শুটকির। যেখান থেকে দেশের মোট শুটকি চাহিদার ৩০-৩৫ শতাংশ মেটানো সম্ভব হয়।
নদীর তীর ঘেঁসে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শুটকি পল্লীতে শত শত নারী–পুরুষ সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলার থেকে মাছ সংগ্রহ, কেটেকুটে সেসব মাছ পরিষ্কার এবং এসব মাছ মাচাং-এ প্রাকৃতিক উপায়ে শুকিয়ে শুটকি উৎপাদন করেন। লইট্যা, পোয়া মাছ, ছুরি মাছ, চিংড়ি মাছ, মইল্যা মাছ, রুপচাঁদা মাছ, ফাইস্যা মাছ, ছোট হাঙ্গর মাছসহ আরও নানা প্রজাতির মাছ শুকানো হয় কর্ণফুলি নদীর পাড়ে। ১৫–২০ দিন সময় নিয়ে রোদে শুকানোর পর এসব মাছ পরিণত হয়ে শুটকিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা বাস্তুহারা এলাকার কর্ণফুলীর তীরেই ৯৮ একরের বিশাল শুঁটকি পল্লিতে ১২০টি মাচাং এ উৎপাদিত হচ্ছে শুটকি। এ শুঁটকি পল্লিতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার শ্রমিক শুটকি উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে বলে এখানকার শুঁটকি উৎপাদনকারীরা জানান।
ইসহাক নামের একজন শ্রমিক বলেন, শুকাতে দেওয়ার আগে কাঁচা মাছগুলোর মধ্যে যেসব মাছ ছোট সেগুলো ধুয়েই রোদে দেওয়া যায়। তবে যেসব মাছ লম্বা যেমন, ছুরি মাছ আর লইট্যা, এগুলো গুন দিতে হয় একটি আরেকটির সঙ্গে। এ কাজে সময় বেশি লাগে। শুধু ধোয়া আর গুন দেওয়াতেই সময় বেশি লাগে। মানুষও লাগে বেশি।
শুটকি সমিতির সভাপতি আব্দুস শুক্কুর সাথে কথা বলে জানা যায়, আছদগঞ্জের মতো যদি আরেকটা আড়ত থাকতো তাহলে ভালো হতো। এখন সাগরে জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পরছে। এজন্য এবার শুটকি উৎপাদন তেমনটি হয়ে উঠে নাই৷
শুটকি সমিতির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হাশেম বলেন, আমাদের সমিতিতে ৬৫ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। শুটকি বেচা-বিক্রির কাজে দৈনিক অন্তত ৫০-১০০ জন শ্রমিক কাজ করে৷
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, একসময় চট্টগ্রামে শুঁটকি ভালো উৎপাদন হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জেলেদের জালে বেশি মাছ ধরা না পড়ায় শুঁটকি উৎপাদনের পরিমানটা কিছুটা কমে এসেছে।