বাংলাধারা প্রতিবেদন »
নগরীতে কোরবানীর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় ফেলে গেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এসব চামড়ায় পঁচন ধরায় বর্জ্য অপসারণের ট্রাকে করে সড়িয়ে নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। এদিকে, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এবার সিন্ডিকেট করে চামড়া কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রথমদিকে কোরবানির অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করলেও চামড়া সরানোর কাজ করেনি। সারারাত রাস্তায় পড়ে থাকার কারণে চামড়ায় পঁচন ধরে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পঁচা চামড়া অপসারণের কাজ শুরু করে চসিক।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ২০০ শ্রমিক ও ৮টি পে লোডারের সাহায্যে ৩২টি ট্রাকে ৯০ ট্রিপে এক লাখ পচা চামড়া অপসারণ করা হয়। পঁচা চামড়া হালিশহর আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরের আবর্জনার ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হয়।
রাস্তায় চামড়া ফেলে রাখার বিষয়টিকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের প্রধান শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, রাস্তায় চামড়া পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। আমরা লক্ষাধিক গরু, ছাগলের চামড়া অপসারণ করেছি। যাতে রোগজীবানু ছড়াতে না পারে সেজন্য চামড়া ফেলে রাখার জায়গায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার এবার ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এই দামে চট্টগ্রামের কোথাও চামড়া বিক্রি হয়নি। প্রথমদিকে বড় চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও পরে দাম পড়তে পড়তে বড় চামড়ার দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত নেমে আসে। দাম পড়ে যাওয়ায় শত শত মৌসুমী ব্যবসায়ী চোখেমুখে অন্ধকার দেখা শুরু করেন। লাভ দূরের কথা, চামড়া বিক্রি করে অনেকের গাড়ি ভাড়ার টাকাও ওঠেনি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার আয়ের একটি বড় উৎস কোরবানির পশুর চামড়া। এসব মাদ্রাসাগুলো এবার চরম আর্থিক সংকটে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, আড়তদারদের কারসাজির কারণে কোরবানির পশুর চামড়ার দরপতন হয়েছে। নিজস্ব এজেন্ট মাঠে নামিয়ে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করলেও তা দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা রাস্তায় চামড়া ফেলে যান।
বহদ্দারহাট এলাকায় শাহাদাত নামে এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, চামড়া ব্যবসার জন্য সমিতি থেকে চড়া সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। এই টাকা পানিতে গেছে। এখন কিভাবে টাকা শোধ করবো জানি না।
আতুরার ডিপো এলাকায় পারভেজ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি পিস ৪০০ টাকা করে তিনি ২৫০টি গরুর চামড়া কিনলেও আড়তদাররা কোনোমতেই ৫০ টাকার বেশি দিতে রাজি হচ্ছে না। কয়েকটি আড়তে ঘুরেও এর চেয়ে কেউ বেশি দাম দিতে রাজি হয়নি। এতে তার পথে বসার অবস্থা হয়েছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে আড়তদাররা জানান, বেশি দাম পাওয়ার আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অনেকক্ষণ পশুর চামড়া বিক্রি করতে চাননি। এতে চামড়া পঁচে গেছে। তাই দামও কমে গেছে।
চট্টগ্রাম বৃহত্তর কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের আড়তদাররা বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা না পাওয়ায় আড়তদারদের ৮০ শতাংশই এবার চামড়া কেনেননি। তবু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তারা প্রায় তিন লক্ষ চামড়া সংগ্রহ করে ফেলেছেন। প্রতি পিস ৫০ টাকা করে এই চামড়া তারা সংগ্রহ করেছেন। সমিতি এ বছর ৫ লাখ গরুর এবং ৮০ হাজার ছাগলের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে আরো চামড়া এসে গেলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারবো।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম