ksrm-ads

২১ মে ২০২৫

ksrm-ads

চট্টগ্রামে গাছ হত্যা বন্ধ হোক

চট্টগ্রামে

পাহাড়ে ঘেরা সমুদ্রবর্তী নদী বেষ্টিত সবুজে ঢাকা নয়নাভিরাম চট্টগ্রামের উপর পাহাড়খেকো নদীখেকো পরিবেশখেকোদের কুনজর পড়েছে বহুআগেই। সেই কারণে একসময়ের সবুজেঘেরা নগরী এখন ইট পাথর কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। যে যে দিকে পারছে দখল দূষণ করে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক রূপ বিনষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। অর্থনীতির লাইফলাইন কর্ণফুলী নদীর দুই পাড় দখল দূষণ করে কর্ণফুলীকে তিলে তিলে হত্যা করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী।

বিপ্লব উদ্যানকে বাণিজ্যিক রূপ দিয়ে সবুজ সতেজ পরিবেশকে রীতিমতো হত্যা করা হয়েছে। এই শহরে সবুজের নিচে বসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার জায়গায় যেন দিন দিন সংকুচিত করা হচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে। বাকী যেটুকু সামান্য সবুজ এই শহরে উপস্থিত, সেই সিআরবিতেও বারংবার বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন মহল কুনজর ফেলছে। গাছ পাহাড় সবুজ নদী প্রকৃতিই যেন এসব হায়নাদের চির শত্রু।

২০২১ সালের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বেসরকারি ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি করে বসে রেলওয়ে। দীর্ঘদিন আন্দোলন করে চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ তা রুখে দেয়।

টাইগারপাস, সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত এ পাহাড়ি জায়গাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই যুগ যুগ ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ঐতিহাসিকদের মনোযোগ ও প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এ আকর্ষণের অন্যতম উৎস নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার টাইগারপাস থেকে সিআরবি এলাকাটি।

কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিল টাইগার পাস সংলগ্ন সিআরবিতে। এ ছাড়া সিআরবি ভবনটি ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এসব বিবেচনা করেই টাইগার পাস সংলগ্ন সিআরবি এলাকাকে ইতিপূর্বে ‘ঐতিহ্য ভবন’ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পারি, চট্টগ্রাম নগরীর ‘নান্দনিক’ সড়ক হিসেবে পরিচিত টাইগারপাস থেকে সিআরবিমুখী পাহাড়ি সড়কটির মাঝের অংশে এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণ করতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে কাটা পড়বে তিন ডজন শতবর্ষী গাছসহ প্রায় শতাধিক গাছ।

চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বিতল রাস্তাটির গাছগুলো কাটা পড়লে পরিবেশ প্রতিবেশের উপর অসম্ভব বিরূপ প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে। নান্দনিকতা হারাবে সবুজের রাণী নয়নাভিরাম সড়কটি।

তাছাড়া একটি গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রদান করে তাতে অন্তত দুজন মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারে। অর্থাৎ একটি গাছ হত্যা করা মানে দুইজন মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলার নামান্তর। অথচ, আমরা অক্সিজেন দানকারী গাছগুলো নির্বিচারে কেটে হত্যা করছি। যা মানুষ হত্যার থেকেও কোন অংশে কম নয়।

কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার, অবকাঠামোগতভাবে দ্রুত বর্ধমান আমাদের চট্টগ্রাম নগরে সবুজে ঘেরা কোনো বড় অঞ্চল নেই। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ফুটপাতের গাছ, রাস্তার পাশের গাছ, ফ্লাইওভার হওয়ার কারণে রাস্তার মাঝের সারিবদ্ধ গাছগুলো কেটে সাবাড় করা হয়েছে আগেই।
নগরীর মধ্যে টাইগারপাস থেকে সিআরবি পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র এলাকাটি শুধু অবশিষ্ট আছে এখন।

পরিবেশ প্রকৃতির সব দিক বিবেচনা করে সবুজবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দ্রুত সরে এসে বিকল্প ভাববার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতির স্বর্গভূমি নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের রাণী খ্যাত টাইগারপাস থেকে সিআরবিমুখী সড়কটির শতবর্ষী ছায়াদাতা সবুজ গাছগুলোসহ অপরিণামদর্শী উন্নয়নের নামে চট্টগ্রামের অবশিষ্ট গাছগুলো হত্যা বন্ধ করার প্রাণপণ দাবি রাখছি।

লেখক : পরিবেশকর্মী, কলামিস্ট

আরও পড়ুন