কেন্দ্রীয় রথযাত্রায় উদযাপন কমিটির আয়োজনে ২শ বছরের প্রাচীন নগরীর নন্দনকানন তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শনের পন্থা অবলম্বনে ধর্মের রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান প্রদান ও এই ধারণাকে মর্যাদাসীন করার লক্ষ্যে মানবিকতায় উজ্জীবিত চেতনার নামই অসাম্প্রদায়িকতা। এই জনপদে সবার শান্তিপূর্ণ বসবাস বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট পরিচায়ক।
রোববার (৭ জুলাই) বিকালে তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ মিত্র চৌধুরী (পুরী) মহারাজের পৌরহিত্যে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথ পরিক্রমা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
রথ পরিক্রমা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। এসময় তিনি বলেন, রথযাত্রা শুধু দেবতার নয়, ভক্তেরও। দেবতার প্রতি ভালোবাসার টান থেকেই ভক্তরা রথ টেনে এগিয়ে চলেন। শ্রীচৈতন্যের সময় থেকে বাঙালির সঙ্গে রথের যোগাযোগ আরও গাঢ় হয়েছে, যা পুষ্ট করেছে বাংলার সংস্কৃতিকে। রথ গতি ও এগিয়ে চলার প্রতীক।
সংবর্ধিত অতিথি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, চট্টগ্রাম শহরে ২শ বছরের প্রাচীন তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসবে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই রথযাত্রায় আছে জয়ের বার্তা। রথযাত্রা তাই প্রাণের আনন্দযাত্রা।
রথযাত্রা উৎসবে বিশেষ অতিথি সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রথযাত্রা উৎসব সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-সৌহার্দ্য-বন্ধুত্বের নিগূঢ় সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে নেয়। চট্টগ্রামে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শামিল হয় জেনে আমি খুশি হয়েছি।
উৎসবে সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, চসিক প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী কিষাণ, ব্যবসায়ী মো. সাহাবউদ্দিন, লিটন ধর। অ্যাড. সুজন কান্তি দে এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ডা. মাধব চন্দ্র চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক বিধান ধর। বক্তব্য দেন তুলসীধাম পরিচালনা পরিষদের সম্পাদক স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী, ডা. মনোজ চৌধুরী, সুজিত হাজারী, জ্যোতির্ময় প্রকাশক এস প্রকাশ পাল, সুধাংশু রঞ্জন দাশ, জহরলাল দত্ত, বিধান ধর, প্রদীপ দাশ, চন্দ্রনাথ পাল, শ্যামদাশ ধর, বাঁশীরাম দে, রতন দেবনাথ, আশুতোষ দেব, প্রবীর দাশ, তপন দাশ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথিদের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্রকে রথারোহণ করানো হয়। তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথের সাথে মহাশোভাযাত্রা সহকারে শ্রীকৃষ্ণায়ন, মনোহরখালী, টেকপাড়া, সদরঘাট মাইজপাড়া, শাহাজীপাড়া, পার্বতী ফকিরপাড়া, কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনি, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘ, সুপ্রভাত বয়েজ ক্লাব, গঙ্গাবাড়ী, পাথরঘাটা গিরিধারী মন্দির ও ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ প্রায় সবগুলো মঠ-মন্দিরের রথসমূহ পরিক্রমায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় অদ্বৈত-অচ্যুত মিশনের বিভিন্ন শাখা এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।
সিএমপির রোডম্যাপ অনুযায়ী এসব রথ নিউমার্কেট থেকে লালদীঘির মোড় ঘুরে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসে। সেখান থেকে চেরাগী পাহাড় হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে লাভলেইন সড়ক দিয়ে পুনরায় নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এসে শেষ হয় পরিক্রমা। এদিকে নগরীর তুলসীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্রের পূজা, গুরু পূজা। দিনব্যাপী বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।